ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ, এশিয়ার উদীয়মান ব্যাঘ্র

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ, এশিয়ার উদীয়মান ব্যাঘ্র

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ সার্বজনীন মডেল। আওয়ামী লীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সঙ্কটের জাল ছিন্ন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ’২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করতে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ ও সামশুল হক চৌধুরীর পৃথক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরও বলেন, গত ৭ বছরে জিডিপি, জাতীয় আয় বেড়েছে। কমেছে দারিদ্র্য, রিজার্ভ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ও রেমিটেন্স প্রবাহ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও মজবুত করার লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন : মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬ সালের নমিনাল জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। প্রবৃদ্ধি অর্জনে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ ॥ দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিগত ৭ বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, উন্নয়ন খাতে অর্থায়ন, অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ঋণ গ্রহণে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাসহ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়। দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিনি জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রম বাজারের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে দেশে-বিদেশে গত সাত বছরে প্রায় এক কোটি ৩৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এত কর্মসংস্থান আর অতীতে কখনও হয়নি। তিনি জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স আয় ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার বাংলাদেশ ॥ সরকারী দলের অপর সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশকে দেখছেন- ‘এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে। সিটি গ্রুপের বিবেচনায় ২০১০ হতে ২০৫০ সময়ে বিশ্বে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক এবং বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নয়নের সার্বজনীন রোলমডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে। বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ বাংলাদেশ ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্বের জবাবে সংসদ নেতা জানান, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙ্গন, নদীর নাব্য হ্রাস, টর্নেডো ও ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও রয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আপদকে দুর্যোগ ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উন্নত দেশসমূহে মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এ জন্য আমরা দায়ী না হয়েও মারাত্মকভাবে এ দুর্যোগের শিকার। তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত অবকাঠামোগত কার্যক্রম এবং স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি সারা বিশ্বে এ দেশকে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ॥ দেশে বিনিয়োগ ও রফতানি আয় বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ফলশ্রুতিতে উৎপাদনশীলতা ও রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অধিক গুরুত্ব দেয়া এবং শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদ্যুত-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত উন্নয়ন ব্যক্তির খাতের বিনিয়োগ ক্রমশ ত্বরান্বিত করছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল সাড়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা এ বছর ৩৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়।
×