ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর সেনানিবাসে অফিসারদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান

বিডিনিউজ ॥ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের একটি নতুন ‘সঙ্কট’ হিসেবে তুলে ধরে ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে বুধবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ সঙ্কট মোকাবেলায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে, সশস্ত্র বাহিনীও এ ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, সকলকে স্ব স্ব জায়গা থেকে স্ব স্ব ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে ছেলেমেয়েরা সংশ্লিষ্ট না হয়। আমরা চাই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়- এমন কিছু ঘটুক তা কখনই কাম্য নয়। মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ থেকে ২০১৬-২০১৭ বর্ষে গ্র্যাজুয়েশন করা অফিসারদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮ জন, নৌবাহিনীর ২৭ জন ও বিমান বাহিনীর ২৪ জন এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার ৭১ জনসহ মোট ২৮০ জন অফিসার এ কোর্সে অংশ নেন। তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ১০ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ তোমাদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও আনন্দের দিন। সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজকে বাংলাদেশের একটি ‘ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রী অর্জন যে কোন সামরিক অফিসারের জন্য অত্যন্ত আকাক্সিক্ষত ও গৌরবের বিষয়। বর্তমানে আমাদের এই স্টাফ কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে; এ জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪১টি, নৌবাহিনীর ৩৫টি এবং বিমান বাহিনীর ৩৭টি স্টাফ কোর্স শেষ হয়েছে। মোট ৪০টি দেশের ৯৯৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আজ তোমরা সমর বিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছ। আমার বিশ্বাস, এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোমাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে।’ ‘শুধু তাই নয়, এখন থেকে আরও বড় ধরনের নেতৃত্ব প্রদানে তোমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ এ বছর ১৪ জন নারী অফিসার গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর নারী অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে। সশস্ত্র বাহিনীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ‘মূর্ত প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধামন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকবেলায়ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসায় সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠনের কাজে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। সশন্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সক্ষমতা অর্জন করেছে।... আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ.. আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল মোঃ সাইফুল আবেদীন। পরে প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং কেক কাটেন।
×