ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আকিল উজ জামান খান (ইনু)

অর্জন প্রত্যাশা ছাড়িয়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অর্জন প্রত্যাশা ছাড়িয়ে

লাইভ ফ্রম ঢাকা বাংলা সিনেমার দুর্দিন নিয়ে বোদ্ধা মহলে চায়ের কাপে বইছে ঝড়। ভাল গল্প, ভাল নির্মাতা, সম্পাদনার অভাব বলে আলোচনার টেবিলে বাংলা ছবির সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন বিজ্ঞ আলোচকরা। ঠিক তখনই স্বভাবমতো সমালোচকদের জবাব দিলেন আবদুল্লাহ মোঃ সাদ। স্বভাবমতো বলা এ জন্য যে ব্যক্তিজীবনে নিভৃতচারী সাদ জবাব দিয়েছেন নীরবে। সাদা-কালোর নির্মিত বাংলা ছবি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকায়’ সাদের অর্জন আমাদের আরেকটি প্রশ্নের মুখেও দাঁড় করায়। চায়ের টেবিলে বাংলা সিনেমা প্রেম থেকে আমরা যারা ঝড় তুলি তারা আসলে কতটা আন্তরিক। কারণ এশিয়া জয় করে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ পা রেখেছে ইউরোপে। তার পরও সাদ ছবি মুক্তির জন্য নিজ দেশে হল খুঁজে পান না। হল মালিকরা লোকসানের আশঙ্কায় সাদা-কালোয় নির্মিত ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ হলে মুক্তি দিতে আগ্রহী নন।অন্য অর্থে বলা যায়, ভাল ছবি দর্শক টানবে এটুকু নিশ্চিত করার যে ব্যর্থতা, তা কি আমাদের সবার নয়? ফিরে আসি সাদের ছবিতে। গল্প, চিত্রনাট্য, পরিচালনা আবদুল্লাহ মোঃ সাদ। ২০১৫-এর ডিসেম্বর ২৮ এ শুরু শূটিংয়ের মেয়াদকাল ছিল ১৭ দিন। সম্পাদনায় সময় নিয়েছেন সাত মাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় পড়াশোনা করা সাদের শুরুটা ছিল বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ দিয়ে। সিনেমা নির্মাণের পথে হাঁটার গল্পটা সাদ ‘এশিয়ান ফিল্ম ভল্টে’র প্যানম কোটজাথানিসকে বলেছেন এভাবে, “আমি সত্যিই জানি না কেন আমি প্রথম চিত্রনাট্য তৈরি শুরু করি। আমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করি কিন্তু তাই বলে পরিচালনায় আসব এমন ভাবনা যে ছিল মাথায় তাও নয়। একটা পর্যায়ে এসে মনে হলো হাজারো অনিশ্চয়তা, ঝুঁকির পরেও চলচ্চিত্রে আমি জীবনের অর্থ খুঁজে পাব। আর সেখান থেকেই শুরু।” ধন্যবাদ সাদকে তিনি শুরু করেছিলেন বলে। তার ছবি দেশের জন্য ২৭তম সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৫২টি দেশের শতাধিক ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সম্মানজনক সিলভার স্ক্রীন এ্যাওয়ার্ডে ছিনিয়ে এনেছেন সেরা পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান। এবারে পা রাখলেন ইউরোপে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব রটেরড্রামে অফিসিয়াল নির্বাচন লাভ করেছে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। ইউরোপীয় ডেব্যুতে যথেষ্ট সাড়াও ফেলেছে ‘ব্রাইট ফিউচার’ বিভাগে নির্বাচিত ছবিটি। সেখানে প্রদর্শনীর সংখ্যা পাঁচ। ছবি নির্মাণের গল্প বলতে গিয়ে সাদ ‘এশিয়ান ফিল্ম ভল্ট’কে আরও বলেন, ‘ছবির নির্মাণের জন্য শুরুতেই আমার প্রয়োজন ছিল নিজস্ব প্রোডাকশন টীম। আর এ বাস্তবতা আমি মেনেই নিয়েছিলাম যে, আমার স্বপ্নের ছবি তৈরিতে দেশে আমি বিনিয়োগকারী পাব না। আর সে জন্য প্রথমে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলি নির্মাণ সংস্থা। টিকে থাকার জন্য বিজ্ঞাপন চিত্র তৈরি দিয়ে শুরু। সেখান থেকে পাওয়া অর্থে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র নির্মাণ। ছবির বাজেট ছিল মাত্র ১০ হাজার ডলার। তার পরও আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা শুরু থেকেই সচেতন থাকায় সব বাধা পেরিয়ে আমরা ছবিটি নির্মাণ শেষ করতে পেরেছি।” ৯১ মিনিট দৈর্ঘ্যরে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র গল্প আমাদের চেনা জীবনের গল্প। নায়ক আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত সাজ্জাদ শেয়ার বাজারে সব হারানো অসংখ্য, তরুণের একজন। পাওনাদারের তাড়ণায় পালিয়ে বেড়াণো যেন জীবন থেকে পালাতে চাওয়া ।তার হতাশা, রাগ, স্বার্থপরতা, প্রেম যেন আমাদের অতি চেনা। আর সাধারণ মধ্যবিত্ত তরুণী তামান্না আমাদের পাশের বাড়ির মেয়ে। বলাবাহুল্য, অসাধারণ অভিনয় করেছেন সাজ্জাদরূপী মস্তফা মনোয়ার। মনোয়ারকে নির্বাচনের কারণ বলতে গিয়ে সাদ বলেন, ‘প্রথমত সাজ্জাদ চরিত্রে আমার চাওয়া শারীরিক গঠনের সঙ্গে যে একেবারে নিখুঁত। আর আমি অবাক হয়ে দেখি যে, মনোয়ার স্রেফ তাকিয়ে থেকেও রাগ, হতাশা বা বেপরোয়া অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম।” মিলান কু-ে অনুপ্রাণিত সাদ বর্তমানে নতুন ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সাদ বিশ্বাস করেন বাংলা ছবির সুদিন ফিরবে। আমরাও সাদের সঙ্গে আশাবাদী।
×