ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন কাল

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন কাল

সাজু আহমেদ ॥ জমে উঠেছে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনী প্রচার। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যশালা মিলনায়তনে মঙ্গলবার প্রার্থী পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে নির্বাচনে অংশ নেয়া অনেক প্রতিযোগীই সেখানে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রেখেছেন। সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং করণীয় বিষয়ের পাশাপাশি নিজের প্রার্থীর পক্ষে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। আজ রাত পোহালেই আগামীকাল নির্বাচন। অন্যান্য নির্বাচনের মতো নির্বাচনে প্রতিটি প্রার্থীই নিজের সমর্থনে ভোটারদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। নিজের মেধা এবং যোগ্যতার সর্বোচ্চ চেষ্টায় ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরছেন। বিজয়ী হলে শিল্পীদের উন্নয়ন তথা অধিকার রক্ষায় কি কি পদক্ষেপ নেবেন তার নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ নিয়ে শিল্পী তথা ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক কৌতূহল লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, মগবাজারের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিসের গলির মুখে এ বিষয়ে প্রচার চালাতে দেখা গেছে প্রার্থীদের। বেশকিছু বছর শিল্পীদের নির্বাচনী প্রচারে এ রকম উৎসব আমেজ দেখা গেল। তবে নির্বাচনের পর কে কি করবেন বা এই সংঘ দিয়ে অতীতের মতো শিল্পীদের আদৌ কোন উন্নয়ন হবে বা কাজে আসবে কিনা সে বিষয়টাই এখন দেখার বিষয়। এবারের অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এর মধ্যে রয়েছেন শহিদুল আলম সাচ্চু, শহিদুজ্জামান সেলিম, ডি এ তায়েব এবং গোলাম মোস্তফা। সহ-সভাপতি পদে আজাদ আবুল কালাম পাভেল, আদিত্য আলম, ইকবাল বাবু, ইয়াসমিন তাজরিন জাহান (তারিন), জাহিদ হোসেন শোভন, তানভীন সুইটি ও রফিকউল্লাহ সেলিম। আর সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন, আহসান হাবিব নাসিম, মীর সাব্বির ও সিদ্দিকুর রহমান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লড়ছেন দুজন। এরা হলেনÑ লুৎফর রহমান জর্জ ও শহীদ আলমগীর। যুগ্ম সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন, আনিসুর রহমান মিলন, আশরাফ কবির, কালাম হোসেন বাবর, সুমনা সোমা, রওনক হাসান এবং নূর মোহাম্মদ রাজ্য। অর্থ সম্পাদক পদে তানিয়া আহমেদ। তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে উর্মিলা শ্রাবন্তি কর এবং শাহরিয়ার নাজিম জয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দফতর সম্পাদক পদে আব্দুল হান্নান, মাসুদ আলম তানভীর (তানভীর মাসুদ) এবং শামস সুমন লড়ছেন। অনুষ্ঠান সম্পাদক পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেনÑ এসএম আরমান পারভেজ, বন্যা মির্জা, শফিউল আলম বাবু ও হাসান জাহাঙ্গীর। আইন ও কল্যাণ সম্পাদক পদের প্রার্থী শামিমা তুষ্টি ও শিরিন বকুল। তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ওমর আয়াজ অনি এবং সৈয়দ আদনান ফারুক (হিল্লোল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পদের জন্য মনোনয়ন নিয়েছিলেন অভিনেত্রী মিশু চৌধুরী। পরে তার নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। নির্বাহী সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন। এরা হলেনÑ আহসানুল হক মিনু, ইন্তেখাব দিনার, ওয়াসিম যুবরাজ, জাকিয়া বারী মম, নওশীন নাহরীন মৌ, নিকুল কুমার ম-ল, মাহমুদ মোস্তফা, মোঃ আফতাব উদ্দিন, মোঃ আবুল কালাম আজাদ (নির্জন আজাদ), মোঃ সিরাজুল ইসলাম (মুকুল সিরাজ), শেখ মেরাজুল ইসলাম, সনি রহমান, সেলিম মাহবুব, সুজাত শিমুল ও হুমায়ুন কাবেরী। তবে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজনের মধ্যে লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে শহিদুল আলম সাচ্চু, সরাসরি চ্যানেল আইয়ে চাকরি করছেন। সে হিসেবে তিনি ওই চ্যানেল কেন্দ্রীক কিছু ভোট অবশ্যই পাবেন। এছাড়া একজন মঞ্চকর্মী হিসেবেও তার পরিচিত রয়েছে। পাশাপাশি সিনিয়র শিল্পী হিসেবে তার প্রতি সুবিচার ও সম্মান দেখাবেন ভোটাররা এমনটাই প্রত্যাশা এই শিল্পীর। তিনি নির্বাচিত হলে সিনিয়র শিল্পীদের পাশাপাশি তরুণদের পাশেও থাকবেন তিনি এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে ঢাকা থিয়েটারের একজন সক্রিয় এবং প্রতিভাবান কর্মী শহিদুজ্জামান সেলিম। মঞ্চ, ছোট পর্দা এবং বড় পর্দায় একজন জাদরেল ও শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ছোটপর্দার পরিচালক হিসেবে পরিচিতি আছে তার। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে নেতিবাচক চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। নির্বাচনে তার ফলাফলও ভাল হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। আরেক প্রতিযোগী ডি এ ডায়েবের সভাপতি হওয়ার বিষয়টিকেও আমলে নিচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টদের ধারণা অনেক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায় কাজ করছেন। মঞ্চের সঙ্গেও সমৃক্ততা ছিল তার। মৃদুভাষি এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। সে হিসেবে কিছু সুবিধা ও ভোটারদের সমর্থন তিনি পাবেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক চ্যানেলের ধারাবাহিকে কাজ করে জন্য তিনি আলোচনায় এসেছেন। শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি নির্মাতা হিসেবেও বেশ কিছু সমর্থন পাবেন। এছাড়া একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কিছু সমর্থন পাবেন। নেতা হিসেবে নয় একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সব ধরনের শিল্পীর কাছে তিনি যেতে পারেন, মিশতে পারেন, তাদের সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। পাশাপাশি একজন ভাল মানুষ হিসেবেও খ্যাতি আছে তার। তাই নির্বাচিত হলে তিনি শিল্পী সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারবেন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সব মিলে ডি এ তায়েব নির্বাচিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সভাপতি পদে এই তিনজনের মধ্যেই অনেকটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য আরেক প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তার নিজের চেষ্টা বলে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ভোটারদের সমর্থন পাবেন এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান হাবিব নাসিম, মীর সাব্বির এবং সিদ্দিকুর রহমান তিনজন তিন সময়ের শিল্পীদের সমর্থন পাবেন। সেক্ষেত্রে যে কেউ নির্বাচিত হতে পারেন সেটা হলফ করে বলা যায়। তবে প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তিনি নিজের পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছেন। তবে বসে নেই আরেক প্রার্থী মীর সাব্বিরও। তার পক্ষেও প্রচুর সমর্থ রয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে স্টার ইজম তার পক্ষে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আহসান হাবিব নাসিম তার মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ড কাজে লাগাবেন। এছাড়া ক্লিন ইমেজও নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনিসুর রহমান মিলন, রওনক হাসান ও সুমনা সোমা প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য শুরু থেকেই সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ আলমগীর বেশ প্রচার চালিয়ে আসছেন। শিল্পকলা একাডেমি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় এলাকা ও মিডিয়া গলিসহ বিভিন্ন শূটিং স্পটে তাকে বেশ সরব দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন তার মতো পরিক্ষিত ছাত্রনেতা নির্বাচিত হলে শিল্পীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবেন। সেক্ষেত্রে তিনি তার সাবেক নেতৃত্বর ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলে সফলও হতে পারেন। সে হিসেবে ভোটারদের তিনি আশ্বস্তও করেছেন। এ বিষয়ে তার সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্ট। তবে যেহেতু এটা অভিনয় শিল্পীদের নির্বাচন সেক্ষেত্রে শিল্পী ইমেজ এবং জনপ্রিয়তাটাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। সে হিসেবে লুৎফর রহমান জর্জ যে বেশ সুবিধা পাবেন সেটাও আলোচনায় রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। আর সহ-সভাপতি এবং নির্বাহী সদস্যসহ অন্যান্য পদগুলোতেও প্রার্থীরা নিজেদের ক্লিন ইমেজের কারণেই জয়ী হবেন। তবে নবীন-প্রবীণ যে কোন শিল্পী তার সহশিল্পী বা নির্মাতাদের সঙ্গে কাজের সময় কতটা শিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন বা করবেন সেই বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে তাদের জয় পরাজয়। কারণ তথাকথিত স্টারদের অনেকেই সহশিল্পীদের সঙ্গে বিশেষ করে নতুনদের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক আচরণ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে এই ইস্যুটিই বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনের আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ আর সেটা হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণের ক্ষেত্রে নবীনদের অনেকটাই উপেক্ষা করেছেন সিনিয়র শিল্পীরা। কেউ কেউ আবার এটাকে স্টারদের সংগঠন হিসেবে যুক্তি দেখিয়ে নবীনদের শিল্পীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি। এছাড়া নতুন সদস্য করার ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণটাকেও অতিরিক্ত হওয়ায় অনেকেই সদস্য হতে পারেননি। পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম নাটকে অভিনয় করা শিল্পীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ অসংখ্য নাটক, টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্রে কাজ করেও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। শত অভিযোগ সত্ত্বেও এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের প্রত্যাশা নির্বাচিত যেই হোন নবীন প্রবীণ বা স্টার ইজম নয় তিনি শিল্পী সমাজের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকবেন, সুখে দুঃখে শিল্পীদের পাশে থাকবেন, ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে তাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করবেন সেটাই তাদের প্রত্যাশা।
×