ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-অশ্বিন লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাকিব-অশ্বিন লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার কলকাতা থেকে ॥ একদিক দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট লড়াই চলবে। আরেকদিকে হায়দরাবাদে সাকিব ও অশ্বিনের মধ্যকার নৈপুণ্য দেখানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চলবে। বিশ্ব সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে যে দুইজন পিঠাপিঠি অবস্থানে আছেন। ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এমন একটি ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরতেও চাইবেন তারা। সাকিব ও অশ্বিন যেন টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিং নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে আছেন অশ্বিন। সাকিব তার পরেই আছেন। র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে আছেন। যদি খুব ভাল করতে পারেন সাকিব, তাহলে অশ্বিনের ধারে কাছে চলে যেতে পারবেন। আর যদি অশ্বিন ভাল করেন, তাহলে সাকিব থেকে আরও এগিয়ে যাবেন। টেস্ট অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থানটি ধরে রাখা এবং ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাই চলবে যেন। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। তার যে কোন মুহূর্তে ভাল নৈপুণ্য দেখানোর ক্ষমতা আছে। তা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল শতক করেছেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন। আবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটও তুলে নেন। দেশের যত বড় অর্জন তাতেই সাকিবের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট খেলার মুহূর্ত নিশ্চয়ই সাকিব স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন? অশ্বিনের সঙ্গে লড়াই নিয়ে অবশ্য সাকিব ভাবছেন না। দলের জন্য কিছু করতে পারাই সাকিবের কাছে মুখ্য। হায়দরাবাদে সাকিব বলেছেন, ‘এভাবে আমি চিন্তা করি না। আমি নিশ্চিত সেও চিন্তা করে না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারা।’ ভারতেরও এ মুহূর্তে সেরা অলরাউন্ডার নিঃসন্দেহে রবিচন্দ্রন অশ্বিনই। তিনিও যে কোন মুহূর্তে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। বল হাতে স্পিন বিষ ছড়িয়ে দিতে পারেন। ভারতের মাটিতে খেলা মানে যেন অশ্বিনের জয়জয়কার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও দুর্দান্ত বোলিং করে দেখিয়েছেন। চতুর্থ টেস্টে তো দুই ইনিংসেই ৬ উইকেট করে তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটিতে খেলানোর জন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ দলে রাখা হয়নি অশ্বিনকে। অশ্বিনও নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে মুখিয়ে আছেন? একদিকে সাকিব এগিয়ে তো আরেকদিকে অশ্বিন এগিয়ে। অশ্বিনের (২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক) চেয়ে সাড়ে চার বছর আগে টেস্ট খেলেছেন সাকিব (২০০৭ সালে টেস্ট অভিষেক)। অশ্বিনের চেয়ে ২টি টেস্ট বেশিও খেলেছেন সাকিব। তবে সাকিবের দুঃখ, কষ্ট, হতাশা থাকতেই পারে। ১০ বছর ধরে টেস্ট খেলে যে মাত্র ৪৬ টেস্ট খেলেছেন। সেখানে পাঁচ বছরেই ৪৪ টেস্ট খেলে ফেলেছেন অশ্বিন। বাংলাদেশ দল বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায় না। তাই সাকিবও বেশি টেস্ট খেলতে পারেন না। সেখানে অশ্বিন দ্রুত টেস্ট খেলেই চলেছেন। রানের দিক দিয়েও সাকিব এগিয়ে আছেন। সাকিবের ৪০.৬৭ গড়ে করা ৩২১৩ রানের বিপরীতে অশ্বিনের রান ৩৪.৯২ গড়ে ১৮১৬। ৪ শতকের সঙ্গে একটি ডাবল শতকও রয়েছে সাকিবের। সেখানে অশ্বিনও চারটি শতক করেছেন। তবে নেই কোন ডাবল শতক। উইকেট শিকারের দিক দিয়ে অবশ্য সাকিব ‘যোজন-যোজন’ পিছিয়ে আছেন। অশ্বিনের শিকার যেখানে ২৪৮ উইকেট, সেখানে সাকিবের শিকার ১৬৫ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৫ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। ১৯.৫০ গড়ে ১৫৬ রান ও ১৩ উইকেট নেন। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ৩৪। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার সংখ্যা ৫। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৫ সালে একটি মাত্র টেস্টই খেলেন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে অল্প সময় ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে অপরাজিত ২ রান করেন। বল হাতে এক ইনিংস বল করার সুযোগ পেয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। এই ৫ উইকেটের মধ্যে একটি আবার সাকিবের উইকেটও। ভারতের বিপক্ষে সাকিব ও বাংলাদেশের বিপক্ষে অশ্বিনের নৈপুণ্য পর্যালোচনায় অশ্বিনই এগিয়ে থাকছেন। নিজ মাটিতে অশ্বিন তো রীতিমত দুর্ধর্ষ। ২৭ টেস্টেই ১৮১ উইকেট তুলে নেন। ব্যাট হাতে দুটি শতকও করেন। বাংলাদেশ-ভারত টেস্টটি হবে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে তো অশ্বিন আকাশচুম্বী বোলিং করেছেন। দুই ম্যাচ খেলে ১৮ উইকেট তুলে নিয়েছেন। দুই ম্যাচের চার ইনিংসের মধ্যে তিন ইনিংসেই ৫ উইকেট বা তার বেশি শিকার করেছেন অশ্বিন। বোঝাই যাচ্ছে, অশ্বিন কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। এ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ কখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি। সাকিবের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার তাই প্রশ্নই উঠে না। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেন। কোন ম্যাচেই ব্যাট করতে পারেননি। ২০১৬ সালে খেলা ম্যাচে ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি। ২০১৪ সালের ম্যাচে ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব। অবশ্য বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে দুইজনকেই সমান পাল্লায় রাখছেন। বলেছিলেন, ‘তাদের (ভারতের) অনেক ভাল স্পিনার আছে। (রবিচন্দ্রন) অশ্বিন অনেক অভিজ্ঞ, র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার। তবে তার মানে এই নয় যে আমাদের স্পিনাররা ভাল নয়। আমাদের ওরাও স্কিলফুল। আমাদের সাকিব আল হাসান আছে, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল (ইসলাম) আছে, ওরা টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ করেছে।’
×