ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত

ঐতিহাসিক টেস্ট থেকে একদিন দূরে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঐতিহাসিক টেস্ট থেকে একদিন দূরে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর মাত্র একদিন বাকি। আজকের দিনটি শেষ হলেই শুরু হয়ে যাবে ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট। বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট লড়াই। যে টেস্টটি ভারতের হায়দরাবাদে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। এ ম্যাচটি শুরু হতেই ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। যেটি বাংলাদেশের জন্য ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট ম্যাচেই রূপ নিচ্ছে। টেস্ট খেলুড়ে সবদল এখন পর্যন্ত ভারতের মাটিতে টেস্ট খেললেও বাংলাদেশ যে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলবে। সেই ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দিয়েই সাদা পোশাকের দুনিয়ায় বিচরণ শুরু হয় বাংলাদেশের। ক্রিকেটের অভিজাত আঙ্গিনায় পা বাড়ায়। যে দলটির বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ, সেই দলটিই কিনা ১৬ বছরে একবারও বাংলাদেশকে আতিথ্য দিল না। অবশেষে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট যখন ১৭ বছরে পা রাখল, তখন সেই সুখক্ষণ মিলল। ১৬ বছর পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজ মাটিতে টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করল। সেই ইচ্ছার ফল বৃহস্পতিবার থেকেই মিলতেও যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। এ টেস্ট শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে নাজমুল হাসান পাপন এ্যান্ড গংয়ের নেতৃত্বে চলা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান কমিটিও ধন্যবাদ পেতেই পারে। তাদের কূটনৈতিক সাফল্যেই যে অবশেষে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে পারবে বাংলাদেশ। হোক সেটি একটি মাত্র টেস্ট। ভারতের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত যে কোন ফরমেটে দ্বিপাক্ষিক কোন সিরিজ কিংবা ম্যাচ খেলার প্রস্তাবই পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেখানে বর্তমান কমিটি ভারতের মাটিতে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে। সেটি আবার টেস্ট। এ ম্যাচের মাধ্যমে সামনে ভারতের সঙ্গে ভারতের মাটিতে আরও ম্যাচ খেলার দুয়ারওতো খুলল। এখন পর্যন্ত বিসিবি’র কোন সভাপতির নেতৃত্বে কোন বোর্ড যা করতে পারেননি, পাপন এ্যান্ড গং তা করে দেখালেন। তাতে গর্বিতবোধও করতে পারেন তারা। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৫টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। ২০১৫ সালে একটি মাত্র টেস্টের সিরিজে বৃষ্টির সুবাদে ড্র হয়েছে। বাকি সব সিরিজেই জিতেছে ভারত। সবকটি সিরিজ হয়েছে আবার বাংলাদেশের মাটিতেই। ২০০০ সালে বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচটির প্রতিপক্ষ থাকে ভারত। একটি মাত্র টেস্টই হয় তখন। হারে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে। এরপর ২০০৪ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার হয়। ২০০৭ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির সুবাদে ড্র হয়, তবে দ্বিতীয় ম্যাচটিতে ইনিংস ব্যবধানে হার হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে আবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। তবে এবার আর ইনিংস ব্যবধানে কোন ম্যাচেই হার হয়নি। প্রথম ম্যাচে ১১৩ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ৮টি টেস্ট খেলে ৬টিতেই হারে। দুটি ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ড্র হয়। এবার ভারতের বিপক্ষে নবম টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। তবে এবার আর বাংলাদেশের মাটিতে নয়। ভারতের মাটিতে হবে টেস্ট। ভারতের মাটিতে টেস্টে কখনই আতিথ্য পায়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডে ও টি২০তেও সেই সুখ যোগ হয়নি। দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজই যে এখন পর্যন্ত ভারতের মাটিতে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ভারতের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজ না খেললেও বিভিন্ন সময়ে নির্ধারিত ওভারের খেলা খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৩২টি ওয়ানডে খেলেছে। ২৬টিতে হেরেছে। ১ ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। আর ৫টিতে জিতেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ২২টি ওয়ানডে খেলে ১৭টি হারের বিপরীতে ৪টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। রেজাল্ট হয়নি ১টি ম্যাচের। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ খেলে সবকটিতে হেরেছে। কিন্তু কখনই দ্বিপাক্ষিক কোন নির্ধারিত ওভারের সিরিজও ভারতের মাটিতে খেলেনি বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে এশিয়া কাপ ও কোকাকোলা তিনজাতি সিরিজ খেলেছে। তাও আবার ১৯৯৮ সালের পর ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে কোন ওয়ানডে ম্যাচও খেলেনি বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজতো প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত চারটি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সবকটি হয় বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ভারতকে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। বাকি তিনটি সিরিজেই হারে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সিরিজ হারের পরই বাংলাদেশকে আতিথ্য দেয়ার চিন্ত-ভাবনা করে ভারত। সেই ভাবনার ফল মিলতে চলেছে। তবে ভারতের মাটিতে এখন পর্যন্ত সবদল মিলিয়ে খুব বেশি ওয়ানডে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। সবমিলিয়ে ৯টি ওয়ানডে খেলে। ১৯৯০ সালে এশিয়া কাপে দুই ম্যাচ, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ, ভারত, কেনিয়াকে নিয়ে অনুষ্ঠিত কোকাকোলা তিনজাতি সিরিজে চার ম্যাচ, ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ দল। ভারতের মাটিতে ১০ বছর আগে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। সেই তুলনায় টি২০তে খেলার অভিজ্ঞতা তরতাজা। এখন পর্যন্ত ৬৫ টি২০’র মধ্যে ৭টি টি২০ ভারতের মাটিতে খেলে। সবকটি গতবছর টি২০ বিশ্বকাপে খেলে বাংলাদেশ। সেখানে ভারতের বিপক্ষেও একটি ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচটিতে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১ রানে হারে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতেই শেষ ম্যাচটি খেলে বাংলাদেশ ব্যাঙ্গালুরুতে টি২০ বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলে। আবার যখন ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামছে বাংলাদেশ, সেটিও হচ্ছে ভারতের মাটিতেই। এবার টেস্ট। ৯৮তম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। যে টেস্টটি ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে সবদেশই ভারতের মাটিতে খেলেছে। খেলছে। শুধু বাংলাদেশ ছাড়া। আর তাই ‘ঐতিহাসিক’ টেস্টই খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই ‘ঐতিহাসিক’ টেস্ট থেকে একদিন দূরে বাংলাদেশ।
×