ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসির বকেয়া দুই হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দশ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসির বকেয়া দুই  হাজার কোটি টাকা

রশিদ মামুন ॥ দশ সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তেল বিক্রির বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। অনেক প্রতিষ্ঠানতো বছরের পর বছর বাকিতে তেল কিনে টাকাই পরিশোধ করছে না। বিপিসি বলছে সব থেকে খারাপ গ্রাহক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সাত বছর ধরে তারা বাকিতে তেল নিয়েই চলেছে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধে নজর নেই। দুই হাজার ২০০ কোটির মধ্যে এককভাবে বিমানের কাছেই বিপিসির পাওনা এক হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। আবার কারও কাছে পাওনা চেয়ে বারবার চিঠি দিলেও সাড়া পাচ্ছে না বিপিসি। বিপিসির একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বিমান আর্থিক সঙ্কটের কথা বলে ২০১১ এর পর থেকে ২০১৬ এর শেষ পর্যন্ত বিপিসিকে কোন টাকাই দেয়নি। এতে তেল বিক্রির বিপুল পরিমাণ বকেয়া জমা পড়ে। বার বার বলেও টাকা পরিশোধ না করায় শেষ পর্যন্ত জ্বালানি বিভাগের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এখন জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিষয়টি সমাধানের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে বিপিসি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বিমানকে বাকিতে আর তেল না দেয়ার নির্দেশনা চায়। এরপর থেকে বিমানকে আর বাকিতে তেল দেয়া হচ্ছে না। বিমান নগদ তেল ক্রয়ের সঙ্গে কিছু কিছু বকেয়াও দিচ্ছে। তবে বিপুল এই টাকা এভাবে দিলে কত বছরে পরিশোধ হবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই বলে জানিয়েছে বিবিসি। বিসিসি বলছে বাংলাদেশ বিমান ছাড়া সকল দেশী-বিদেশী বেসরকারী বিমান নগদ টাকাতে বিসিরি কাছ থেকে তেল কেনে। তাদের কাছে বিসিসির কোন বকেয়াও নেই। একমাত্র সরকারী বিমানই তাদের কাছ থেকে বাকিতে তেল নিত। বিপিসি সম্প্রতি সংসদীয় কমিটিতে তাদের বকেয়ার যে তথ্য উপস্থাপন করে তাতে দেখা যায়, বিমান ছাড়াও তারা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ রেলওয়ে, প্রতিরক্ষা সার্ভিসেস, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিআইডব্লিটিসি, পেট্রোবাংলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে তেল বিক্রির টাকা পাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের কাছে পাওনার ৩৭৭ কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে দুই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দেনা-পাওনা থেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং প্রতিরক্ষা সার্ভিসের টাকাও নিয়মিত আদান প্রদানের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিমানের বকেয়া নিয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনও বিপিসির বকেয়ার অর্থ পরিধোশ করছে না। তাদের বারবার বলার পরও পাওনা পরিশোধের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়ে অর্থ পরিশোধ না করলে সেবামূল্যের সঙ্গে প্রচলিত নিয়মে সুদ পরিশোধ করতে হয়। বিমানের ক্ষেত্রে তেল ক্রয়ের অর্থের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সুদও পরিশোধ করতে হবে। বিমানের তেলের দর এক হাজার ১০৪ কোটি টাকার সঙ্গে সুদই রয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক শৃঙ্খলা থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন তেল বিক্রি করে গেল অথচ টাকা পেল না, আবার কোন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন তেল ক্রয় করল অথচ টাকা দিল না এটা কোন অবস্থায় তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক শৃঙ্খলা নেই বলে মনে হয়। বিসিসি বছরের পর বছর লোকসান দিয়েছে। একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান আরেকটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে পারে না বলে মনে করেন তিনি। বিপিসি বলছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের কাছে বকেয়া ৪৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা চেয়েও বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বিপিসির আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এখন নিরুপায় হয়েই প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
×