ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন বছর পর নায়িকা অন্তরার লাশ তুলে ময়নাতদন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তিন বছর পর নায়িকা অন্তরার লাশ তুলে ময়নাতদন্ত

আজাদ সুলায়মান ॥ এ ধরনের দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় হলিউডের ছবিতে। নায়িকার রহস্যজনক মৃত্যুর তিন বছর পর তার মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। তারপর মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন হয়। প্রমাণিত হয়- পরিকল্পিত হত্যাকা-। দেশীয় চলচ্চিত্রের নবাগত নায়িকা অন্তরার বেলায়ও তেমনটিই ঘটেছে। রহস্যজনক মৃত্যুর তিন বছর পর তার মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশেই তার মরদেহ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যালে। মঙ্গলবার পুলিশের একটি দল আজিমপুর কবরস্থান থেকে লাশ তোলে। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রপাড়ায় তোলপাড় দেখা দেয়। অন্তরার স্বামী শফিকুল ইসলাম খোকনের ঘনিষ্ঠজনদের মঙ্গলবারই ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে গিয়ে খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ বুধবার এ মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এতদিন পর ময়নাতদন্তে কী পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নও ছিল হাসপাতালে দেখতে আসা লোকজনের। প্রশ্ন করা হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, তিন বছর পর মরদেহের অবশিষ্ট তো হাড়গোর ছাড়া আর কিছুই থাকে না। অন্তরার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিছু হাড় নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে কী আছে তাতে। তিন বছর পর কী থাকে হাড়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত হাড় থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করা হবে, যাতে চিহ্নিত করা যায় এ মরদেহ অন্তরার নাকি অন্য কারোর। যদি অন্তরার হয়ে থাকে তাহলে দেখতে হবে কী কারণে মৃত্যু ঘটেছিল তার। হাড়ে যদি কোন ক্ষতচিহ্ন থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল। যদি তাকে বিষ খাওয়ানো হয়ে থাকে তাহলে হাড়ে আর্সেনিকের নমুনা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক জায়গায়ই এমন নজির রয়েছে যে, তিন-চার বছর পর লাশের অবশিষ্টাংশ ময়নাতদন্ত করে মুত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এখন দেখা যাক অন্তরার ক্ষেত্রে কী আসে। এ সম্পর্কে লালবাগ থানার ওসি মনিরুজামান বলেছেন, তিন বছর পর অন্তরার মরদেহ বলতে যেটুকু উদ্বার করা হয়েছে সেটা হলো কিছু হাড়গোড়, যা শুকিয়ে গেছে। পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মৃত্যুর পর থেকেই অন্তরাকে হত্যার অভিযোগ করে আসছেন স্বজনরা। তখন থেকেই তার বাবা-মা এটাকে হত্যাকা- প্রমাণ করার জন্য নানাভাবে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ এ অভিযোগ তদন্ত করছিল। তারাই আদালতের আশ্রয় নেয়। শেষ পর্যন্ত গত ১২ জানুয়ারি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দশম আদালতের বিচারক অন্তরার লাশ তোলার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশেই গতকাল এ মরদেহ তোলা হয়। মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। আদালতের আদেশে তারাই লাশটি তুলেছে। ডিবি পুলিশ তদন্তের স্বার্থে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি আমিনুল ইসলাম মামলাটির তদারকি করছেন। এডিসি আমিনুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, এখন কথা বলার সময় নেই। পরে সব বলব। আগে দেখি কী আসে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম খোকন ২০১০ সালের ২৬ মে আগের বিয়ে গোপন রেখে অন্তরাকে বিয়ে করেন। তারপর থেকেই অন্তরার সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে বিয়ের কিছুদিন পর অন্তরা জানতে পারেন খোকনের স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে। অন্তরা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। এ অবস্থায় হঠাৎ ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। বাসায় ঝগড়ার একপর্যায়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু ঘটেছে বলে জানানো হয় স্বামীর পক্ষ থেকে। তাড়াহুড়ো করেই তার লাশ হাসপাতাল থেকে বের করে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। তারপর থেকেই অন্তরার পরিবার দাবি করে আসছে এটা হত্যাকা-। হত্যার অভিযোগ অন্তরার স্বামীর বিরুদ্ধে। পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রেমের ছলনায় ২০১০ সালের ২৬ মে অন্তরাকে বিয়ে করেন খোকন। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা উত্তরপাড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম খোকন মিয়া। গাজীপুরে শূটিং করতে গিয়েই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান অন্তরা। বিয়ের পর থেকেই অন্তরা প্রতারিত হতে থাকেন। অথচ চলচ্চিত্রে বেশ ভাল অবস্থান ছিল তার। পাগল মন, প্রেমের কসম, লেডি র‌্যাম্বো, শয়তান মানুষ, নাগ-নাগিনীর প্রেমসহ বিভিন্ন দর্শকপ্রিয় ছবির নায়িকা ছিলেন তিনি। অবশ্য তার আগেও অন্তরার একটি বিয়ে হয়েছিল। ওই পক্ষে অপ্সরি জান্নাত নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে। সেটা জেনেও তাকে বিয়ে করেন খোকন। বিয়ের কিছুদিন পরই অন্তরা জানতে পারেন খোকনেরও স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয় কলহ। এর মধ্যেই আইয়ান ইসলাম অর্থ নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয় এ দম্পতির। এ অবস্থায় হঠাৎ ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি ৩টায় অন্তারার বাসায় যান খোকন। সেখানে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে অন্তরাকে আহতাবস্তায় নেয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তার মুত্যু ঘটে ৮ জানুয়ারি। সেদিনই তাড়াহুড়ো করে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। এ বিষয়ে অন্তরার মায়ের বরাত দিয়ে ডিবি পুিলশ জানায়, বাসায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে অন্তরাকে বাসায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিজয়নগরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তার মা তাকে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ বিষয়ে অন্তরার মা আমেনা সাংবাদিকদের বলেছেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে ইসলামিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মনোয়ারায় নেয়া হলেও অন্তরার কাছে আমাদের যেতে দেয়া হতো না। বাধা দিত খোকন। এমনকি মৃত্যুর পর ডাক্তারের চিকিৎসাপত্রও দেখতে দেয়া হয়নি আমাদের। মারা যাওয়ার পর থেকে খোকন বলত, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, যেটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। অন্তরার লাশটা পর্যন্ত তার কর্মস্থল এফডিসিতেও নিতে দেয়নি খোকন। তাড়াহুড়ো করে দাফন করা হয় আজিমপুরে।
×