ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেএমসির হ্যান্ডবল খেলোয়াড় রূপা হাবিবা

‘ভাঙ্গাচোরা দল নিয়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি’

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘ভাঙ্গাচোরা দল নিয়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি’

রুমেল খান ॥ ভাঙ্গাচোরা দল নিয়ে ফাইনালে জয়ী হওয়া ভীষণ কঠিন ব্যাপার। আর এই কঠিন কাজটিই করে দেখাল বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ফাইনালে খেলতে পারেননি দলের চার খেলোয়াড়। ফাইনালে আহত হয়ে সাইড বেঞ্চে চলে যান আরেক খেলোয়াড়। তারপরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে খেলে বিজেএমসিই জেতে, হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিপক্ষা বাহিনীকে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান বিজেএমসির রূপা হাবিবা। খেলা শেষে কথা হয় রূপার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৯ সালে বিজেএমসিতে যোগ দেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিজয় দিবস হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বিজেএমসিকে টানা দুবার শিরোপা জিততে দেখেছেন তিনি। এত সমস্যা নিয়েও কিভাবে ফাইনালে জিতল বিজেএমসি? ‘ফাইনালের আগে আমাদের চার খেলোয়াড় নিষিদ্ধ করে হ্যান্ডবল ফেডারেশন। ফাইনালে দলের খেলোয়াড় ডালিয়া ডান হাতের কব্জি ইনজুরিতে পড়ে সাইড বেঞ্চে চলে যান। অপর খেলোয়াড় জলি ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে চোট নিয়ে খেলেন। এত বিপর্যয় সত্ত্বেও আমরা মোটেও ভেঙ্গে পড়েনি। বরং এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে জানপ্রাণ দিয়ে খেলেছি এবং ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তাই এই বিজয় আমাদের সবার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। কারণ আমরা বলতে গেলে ভাঙ্গাচোরা দল নিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এটা অনেক বড় ব্যাপার।’ সুদর্শনা রূপার উচ্চারণ। দলের শিরোপা জেতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কোচ নাসিরউল্লাহ লাভলুর বলে মনে করেন রূপা। মাত্র ১৪ দিনের অনুশীলনে দলকে শিরোপা জেতান তিনি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মেয়ে রূপা। সেখানে স্কুল ও আন্তঃস্কুল পর্যায়ে হ্যান্ডবল খেলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। আন্তঃস্কুল হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় আমাদের স্কুল (কাজী সাহাবউদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমাদের খেলা শেখাতেন আবুল হাশেম স্যার। ওখান থেকেই সরাসরি বিজেএমসিতে জয়েন করি।’ হ্যান্ডবল ছাড়া ভলিবল খেলতেও অনেক পছন্দ করেন রূপা। সময়-সুযোগ পেলে খেলেও থাকেন। পঞ্চগড়, পাবনা, খুলনা ও রংপুরসহ অনেক জেলা দলের হয়ে খেলেছেন। এ বছরেই চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আন্তঃজেলা ভলিবল প্রতিযোগিতায় পাবনার হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদও পেয়েছেন। প্রিয় হ্যান্ডবলার? ‘বিজেএমসির ডালিয়া আক্তার।’ দেশের মহিলা হ্যান্ডবল প্রসঙ্গে রূপার চাওয়া, ‘ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের হ্যান্ডবল অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমি চাইব এটাকে আরও এগিয়ে নিতে যেন সরকার এবং ফেডারেশন সুদৃষ্টি দেয়। আমার এলাকা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় যেন একটা হ্যান্ডবল একাডেমি তৈরি করা হয় শুধু মেয়েদের জন্য। কারণ জাতীয় দলের সিংহভাগ মেয়েই আসে তেঁতুলিয়া থেকে।’ ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘এসএ গেমসে স্বর্ণ জিততে চাই। সেই সঙ্গে চাই সাফ অঞ্চলের সেরা দল হতে।’ হ্যান্ডবল খেলা থেকে অবসরের পরের লক্ষ্য? ‘এই খেলাটিকে অনেক ভালবাসি। জানি না খেলা ছাড়ার পর কি করব। হয়তো এই ভালবাসাই আমাকে আবার হ্যান্ডবলে ফিরিয়ে আনতে পারে। সেটা হয়তো অন্য কোন ভূমিকায়।’ যখন হ্যান্ডবল খেলা শুরু করেন, তখন বাবা হায়দার আলী (কৃষিজীবী) এবং মা জামিনা বেগম (গৃহিণী) রূপাকে খেলতে নিষেধ করেছিলেন। পরে যখন দেখলেন তাদের মেয়ে খেলে সুনাম কুড়াচ্ছে, বিজেএমসিতে চাকরি পেয়েছে এবং অর্থও উপার্জন করছে, তখন মেনে নেন। ইডেন মহিলা কলেজে ডিগ্রী ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী রূপার হ্যান্ডবলের বাইরে অন্য প্রিয় খেলা ক্রিকেট। প্রিয় ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অবসরে গান শুনতে ভালবাসেন। প্রিয় কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল।
×