ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

স্বস্তি ফিরছে শারাপোভার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্বস্তি ফিরছে শারাপোভার

অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে টেনিস কোর্টে আলো ছড়িয়েছেন মারিয়া শারাপোভা। কোর্টের পারফর্মেন্স ছাড়াও বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগীদের মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে তার রূপ-গুণ। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করেই সমর্থকদের চমকে দেন তিনি। ডোপ নিয়ে টেনিস থেকেই নির্বাসনে চলে যেতে হয় রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্লকে। প্রথম দিকে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল দুই বছর। সেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপীল করেন মারিয়া শারাপোভা। যার ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমায় ৯ মাস। সেই হিসেবে এ বছরের এপ্রিলেই পেশাদার টেনিসে ফিরতে পারবেন মারিয়া শারাপোভা। স্টুটগার্ট ওপেন দিয়েই নতুন করে মিশন শুরুর কথা তার। দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরে থাকার পর টেনিস কোর্টে আবারও র‌্যাকেট হাতে লড়াইয়ে নামতে উন্মুখ হয়ে আছেন মাশা। মারিয়া শারাপোভার শুরুটা কিন্তু দুর্দান্ত। ২০০৪ সালে, তখন শারাপোভার বয়স মাত্র সতেরো। ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরক ঘটেছিল তার। সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জিতেই নজর কেড়েছিলেন টেনিসপ্রেমীদের। সেই যে শুরু। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টেনিস কোর্টের পারফর্মেন্সে আর রূপ-সৌন্দর্য দিয়ে আলাদাভাবেই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামসহ মোট ৩৫টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতেন শারাপোভা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে দীর্ঘদিন রাজত্বও করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বের জনপ্রিয় এবং শীর্ষ ধনী এ্যাথলেট হওয়ার তকমাটাও গায়ে মেখেছেন তার। কিন্তু হায়! এই শারাপোভাই বিশ্ব টেনিসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের জন্ম দেন। গত বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় করা ডোপ পরীক্ষায় তার দেহে নিষিদ্ধ উপাদান মেলডোনিয়াম পাওয়া যায়। ওয়ার্ল্ড এ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা) শারাপোভার নমুনা পরীক্ষা করে তার মেলডোনিয়াম নেয়ার প্রমাণ পায়। এরপর থেকেই প্রতিযোগিতামূলক টেনিস কোর্টের বাইরে অবস্থান করছেন মারিয়া শারাপোভা। তবে নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাও মন্দ কাটছে না তার। মস্কোয় নিজের ক্যান্ডি ব্র্যান্ড সুগারপোভার প্রচারণা নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সেখানেই রাশিয়ান এক টেলিভিশন সম্মুখীন হয়েছিল মাশার। রাশিয়ান তারকা সেই সাক্ষাতকারেই জানালেন তার নিষেধাজ্ঞার সময়ে করা কর্মকা-ের কথা। শারাপোভার মতে, ‘সময় কত দ্রুত চলে যায়! মনে হচ্ছিল, ১৫ মাস অনেক লম্বা সময়। কিন্তু এখন তো আমি প্রত্যাবর্তন থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে। এত বছর ধরে এত টুর্নামেন্টে খেলা, এত এত দেশ সফরের পর মনে হচ্ছে, আমি খুব স্বাভাবিক একটা জীবনযাপন করছি এখন। আমার জন্য বিরতিটা দরকার ছিল। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে ভাল লাগছে। সবার সঙ্গে বসে ডিনার করা। একটা রাত নয়, অনেকগুলো রাত পরপর... এটা দারুণ ব্যাপার।’ সবকটি গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টেই শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন শারাপোভা। অলিম্পিকে রাশিয়ার পতাকাবাহক ছিলেন, শীতকালীন অলিম্পিকে রাশিয়ার মশালও বহন করেছেন তিনি। তবে শারাপোভার মতে, সবকটি গ্র্যান্ডসøাম জিততে পারাটাই তার জন্য বিশেষ কিছু। এ প্রসঙ্গে মাশা বলেন, ‘এ সবকিছুর অংশ হতে পারাটা আমার জন্য গর্বের। একজন এ্যাথলেট হিসেবে আপনি জানেন না সামনে আপনার জন্য কী আছে, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সৌভাগ্য, ক্যারিয়ারে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। খুব অল্প বয়সে জেতার অভিজ্ঞতা, খুব কঠিন ম্যাচে হাল ছাড়িনি। আলাদা করে কোনটাকে বেছে নেয়া কঠিন। তবে চারটি গ্র্যান্ডসøাম জেতা অবশ্যই বিশেষ কিছু।’ ব্যর্থতাকে কখনই ভয় পাননি শারাপোভা। নতুন কিছু করাটাও তার নেশা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় চেয়েছি নতুন কিছু করতে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। আমি কাজ ভালবাসী। সব সময় টাকার জন্য নয়। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া, নতুন কোন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করা- এগুলো সব সময় আমাকে টানে। ব্যর্থতার ভয় আমাকে দমাতে পারে না কখনও। এটাও বেশ সাহায্য করেছে।’ খুব তরুণ বয়সেই অন্য দেশে থিতু হতে হয়েছে রাশিয়ান তারকাকে। সেটা কি খুব কঠিন ছিল তার ওই বয়সে কি খুব ভাল ইংরেজী জানতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শারাপোভা বলেন, ‘ওই সময় জানতাম না। কিন্তু আমি খুব দ্রুত শিখেছি। কারণ, টেনিসে আমার আশপাশে এত ছেলেমেয়ে ছিল, ওরা কথা বলা থামাতই না। আমি একটা স্কুলে যেতাম, একজন শিক্ষকও রেখেছিলাম, যিনি আমাকে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ইংরেজী শেখাতেন। তবে আমি আসলে ইংরেজী শিখেছি ওই একাডেমির ছেলেমেয়েগুলোর কাছ থেকেই।’ টেনিস কোর্টের বাইরে ব্যবসা এমনকি মডেলিংয়েও আলাদা সুনাম রয়েছে শারাপোভার। তবে এবার নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন তিনি। তার নতুন রূপ লেখিকার। সেই সঙ্গে বক্সার হিসেবেও! তবে বইটা নিজের সম্পর্কেই লিখেছেন তিনি। যা আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে। এ বিষয়ে তার অভিমত হলো, ‘আমি একটি বই লিখছি, যা সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে। প্রথমে ইংরেজীতে পরবর্তীতে তা রাশিয়ান ভাষায় রূপান্তর করা হবে।’ শুধুই যে বই লিখছেন তা কিন্তু নয়; নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে মারিয়া শারাপোভা হার্ভাড বিজনেস স্কুলে স্বল্পদীর্ঘ কোর্সও সম্পন্ন করেছেন। এই সময়টাতে শারাপোভা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বক্সার হিসেবেও। তিনি বলেন, ‘আমি বক্সিংয়ে চেষ্টা করছি কারণ আমি নিজেকে ভাল ফর্মে রাখতে চাই। তাই কিছু বিশেষ লোক রয়েছে যাদের আমি আঘাত করতে চাই, সেক্ষেত্রে এই বক্সিং শেখাটা হবে অসাধারণ।’ সামনেই ৩০তম জন্মদিন শারাপোভার। এমন দিনে বিশেষ কোন উপহার আপনি চান? শারাপোভা জানান, ‘সত্যি বলতে আমি জন্মদিনের উপহার গত বছরই পেয়ে গেছি, যখন জানতে পারলাম এই এপ্রিলেই কোর্টে ফিরতে পারব। কোর্টে ফেরাটাই হবে আমার জন্য সেরা উপহার।’
×