ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়রানির অভিযোগ ৪ হাজার ৫৩০;###;অভিযোগের শীর্ষে সোনালী ও ব্র্যাক ব্যাংক

৫ বছরে গ্রাহকের অভিযোগ ১৯ হাজার ৪৫০

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

৫ বছরে গ্রাহকের অভিযোগ ১৯ হাজার ৪৫০

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত পাঁচ বছরে ব্যাংকিং খাতে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের পরিমাণ ১৯৪৫০। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এ সময় ২৩৮৪ অভিযোগ ফোনে ও ২ হাজার ১৪৬ অভিযোগ লিখিতভাবে করেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা। এসব অভিযোগগুলো শতভাগ নিষ্পত্তি এবং গত বছরের তুলনায় কমেছে বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। এসব অভিযোগের শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। পরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩০টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ২৩৮৪ অভিযোগ ফোনে ও ২ হাজার ১৪৬ অভিযোগ লিখিতভাবে করেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এসব অভিযোগগুলো শতভাগ নিষ্পত্তি এবং গত বছরের তুলনায় কমেছে বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ আসে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪ হাজার ৪৭৬টি অভিযোগ করেছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪ হাজার ২৯৬টি অভিযোগ করেছিল। ওই বছর অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ছিল ৬৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। যা মোট অভিযোগের ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল অর্থবছরে প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এর পরিমাণ ৫৬৩টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৩৭৩টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৯১টি অভিযোগ এসেছে। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬৮টি, জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৩১টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০৪টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৮৪টি, পূবালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৩২টি, রূপালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৩১টি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২৬টি অভিযোগ এসেছে। এদিকে গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ১২টি, বেসরকারী ব্যাংকে ৭১টি ও বিদেশী ব্যাংকে ২টি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৯ বার পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নতুন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ফার্মাস ব্যাংকে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয় ৮ বার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে ৬ বার, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪ বার করে পরিদর্শন চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এফআইসিএসডি। প্রতিবেদন দেখা যায়, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৪৫০টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রায় সব নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে। এফআইসিএসডির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে টেলিফোনে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১১১৬, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৫৮, কার্ড সংক্রান্ত ১৪৭, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ১২৭, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৮, ট্রেড বিল সংক্রান্ত ৩১, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ৪ বার ও বিবিধ অভিযোগ ছিল ৫৪৩টি। এছাড়া গতবছর লিখিতভাবে ২ হাজার ১৪৬টি অভিযোগ আসে। সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৪৪৬, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৮৪, বৈদেশিক বিল সংক্রান্ত ২৯২, স্থানীয় বিল সংক্রান্ত ২০৪, কার্ড সংক্রান্ত ১৫৬, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ১১০, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ৫৭, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৬ ও বিবিধ অভিযোগ ছিল ৪৪১টি। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় গ্রাহকের হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদান ব্যাংকিং খাতের একটি অঙ্গীকার হওয়া উচিত। আর এ অঙ্গীকার পূরণে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বদ্ধপরিকর। গবর্নর বলেন, গ্রাহকদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকগুলোও প্রতিযোগিতামূলক উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন ও গ্রাহক ভিত্তি প্রশস্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। গবর্নর বলেন, দেশের জনগণ আমাদের বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রাখেন। বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের সেবা দিতে হবে। এই সেবা দিতে গিয়ে যে অভিযোগ ও অসন্তুষ্টি থাকে তা অনাকাক্সিক্ষত। তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহকভিত্তিক সেবা থাকতে হবে; প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম বেশি থাকতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ফ্রন্ট ডেক্সকে প্রাধান্য দিতে হবে। গ্রাহকদের সব ধরনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে সেই অভিযোগ সমাধান করতে হবে। এ সময় ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ব্যাংক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এই সেবার প্রসার দিন দিন বাড়ছে। তবে কোন ব্যাংকের ওপর যদি জনগণের আস্থা কমে যায়। সেই ব্যাংকের টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক একেএম আমজাদ হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কনজুমার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমান এবং এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের আনিস এ খানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
×