ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের রূপকল্প আমেরিকাকে কোথায় নিয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্পের রূপকল্প আমেরিকাকে কোথায় নিয়ে যাবে

গত ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৬ মিনিটের যে ভাষণ দেন তাতে তিনি তার দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যত আমেরিকার একটা রূপকল্প তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমেরিকার স্বার্থ সবার আগে এটাই হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সকল কার্যকলাপের মূল দর্শন। ট্রাম্পের ভাষণে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ পুরোপুরি স্থান পায়। তিনি বলেন, বহু দশক ধরে আমরা আমেরিকান শিল্পের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশী শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছি। অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর পেছনে ভর্তুকি দিয়েছি অথচ আমাদের সেনাবাহিনীকে অতি বেদনাদায়কভাবে নিঃশেষিত হতে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমেরিকাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে মরচে ধরা কলকারখানা আমেরিকাজুড়ে সমাধি ফলকের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এর জন্য দায়ী হচ্ছে আমেরিকার চাকরি-বাকরি আউট সোর্সিং করা। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ইউ-টার্ন ঘোষণা করে ট্রাম্প বলেন, আমরা অন্য রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করেছি অথচ নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। বিদেশে আমরা ট্রিলিয়নকে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছি অথচ আমেরিকার নিজের অবকাঠামো ক্ষয়ে শোচনীয় আকার-ধারণ করেছে। আমরা অন্য দেশকে ধনী বানিয়েছি অথচ আমাদের নিজেদের দেশের সম্পদ, শক্তি ও আস্থা নিঃশেষিত হয়ে দিগন্তে মিশিয়ে গেছে। তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলার প্রতি অবিচল ও অঙ্গীকারাবদ্ধ দাবি করে বলেন, আমেরিকা আজ অপরাধ, গ্যাং, মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসে জর্জরিত একটি দেশ। এসবের কারণে ইতোমধ্যে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে এবং দেশ অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই অবস্থার অবসান এখনই, এই মুহূর্ত থেকেই হতে হবে। এতদিন যা হয়েছে হয়েছে। এগুলো সবই অতীতের ব্যাপার। এখন আমরা শুধু ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করব। আমরা আবার আমেরিকাকে শক্তিশালী করে তুলব, সম্পদশালী করে তুলব। আমেরিকাকে আবার গর্বিত, মহান ও নিরাপদ করে তুলব। বিশ্ববাসীর প্রতি তার প্রথম বাণীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে যেমন র‌্যাডিকেনপন্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন তেমনি আবার পপুলিস্ট বা লোকরঞ্জনবাদী হিসেবেও হাজির করেছেন। তবে তিনি যা বলেছেন, সত্যিই যদি তা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে ঢের বেশি হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ট্রাম্প যে ভূমিকা পরিগ্রহ করেছেন তাতে তিনি স্ট্যাটাসকো রক্ষাকারী হিসেবে নয় বরং স্ট্যাটাসকো ধ্বংসকারী হিসেবে প্রতিভাত হবেন। বিশ্বায়ন ও আমেরিকার বিশিল্পায়নে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন যারা ট্রাম্পকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছিল তারা নিশ্চয়ই ট্রাম্পের এই ভাষণে উৎসাহিত ও উৎফুল্লবোধ করবে। কিন্তু এই রূপান্তর থেকে যারা লাভবান হয়েছিল তারা কিন্তু নিচের দিকের মানুষজন নয়। এক রিপোর্টে দেখা গেছে নিচের দিকের ৫০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্কের গড় প্রাক-কর আয় ১৯৮০ সাল থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু প্রায় ১৬ হাজার ডলারে স্থির থেকেছে। অন্যদিকে শীর্ষ ১ শতাংশের গড় প্রাক-কর আয় ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার থেকে বেড়ে প্রায় ১৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। সর্বাধিক ধনী ১ শতাংশ মানুষ এখন শতকরা ৩৭ শতাংশের বেশি পারিবারিক সম্পদের মালিক। অন্যদিকে নিচের দিকের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৬ কোটি আমেরিকানের রয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ পারিবারিক আয়। ট্রাম্প সমর্থকরা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাবোধের জন্য বাইরের শক্তিগুলোর ঘাড়ে দোষ চাপাতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প ও তার কেবিনেট সদস্যদের মতো লোকেরা যারা ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতে উদ্যত তারাই আমেরিকাকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য দায়ী অর্থনৈতিক শক্তিগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। আমেরিকাকে আবার সেই মহান রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য এই লোকগুলোর ওপর আস্থা রাখতে হবে। ট্রাম্প সবার আগে আমেরিকার স্বার্থের সেøাগান তুলেছেন। অথচ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিমত যে রাশিয়া ট্রাম্পের স্বার্থ এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। তারা রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প সহযোগীদের সংশ্রব পরীক্ষা করার জন্য ওয়ারেন্ট চেয়েছে। এই তদন্ত কিভাবে পরিচালিত হবে তা থেকেই বোঝা যাবে ট্রাম্প কিভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত করতে যাচ্ছেন। তবে তিনি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছেন যে রাশিয়ার সঙ্গে তিনি নতুন জোট গড়ে তুলতে চান। নিজের সংক্ষিপ্ত অভিষেক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিনবার সীমান্ত নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেছেন যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মেক্সিকান অনুপ্রবেশ রোধে, অভিবাসন সংস্কার কার্যকর করবে তিনি কতটা গুরুত্বারোপ করছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে এখন যেসব অভিবাসী আসছে তাদের সিংহভাগই মধ্য আমেরিকা থেকে আগত। এদেরও আবার অনেকেই নারী ও শিশু যারা ওই অঞ্চলের সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাইছে। ট্রাম্প গোটা দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অবিচল। আর সেটা করতে গিয়ে তিনি সীমান্ত রক্ষার নামে বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন কিছু মানুষের আরও কতখানি ক্ষতিসাধন করবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×