ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ১০ থেকে ১৮ বছর ধরে কারাগারে আটক

২০ বন্দীকে কেন জামিন দেয়া হবে না ॥ হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

২০ বন্দীকে কেন জামিন দেয়া হবে না ॥ হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ফৌজদারি মামলায় দীর্ঘ ১০ থেকে ১৮ বছর ধরে কারাগারে আটক ২০ বন্দীকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রুল ছাড়াও মামলার নথি তলব করেছে। এই বন্দীদের মধ্যে ১০ জনকে ২৩ ফেব্রুয়ারি, পাঁচজনকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ও অপর পাঁচজনকে ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ এবং বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএইচ মোঃ নূুরল হুদা জায়গীরদারের নেতৃত্বাধীন পৃথক দুটি বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। আদালতে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী আনিচ-উল মাওয়া ও সৈয়দা সাবিনা আহম্মেদ মলি শুনানিতে অংশ নেন। এর আগে সোমবার তাদের জামিন চেয়ে আবেদন করে সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটি। দেশের বিভিন্ন কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আটক বন্দীদের মধ্যে ২০ জনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে এই আবেদন করা হয়। আবেদনে দেখা যায়, বন্দীদের অধিকাংশই সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। যাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে প্রায় শত বার। কিন্তু শেষ হয়নি মামলার বিচার, মেলেনি জামিন। এই ২০ বন্দী হলেন, নজরুল ইসলাম, সিরাজ, আলম মিয়া, মতিউর, ফয়েন, কাইলা কালাম ওরফে কালাম, মোঃ আবদুল খালেক, অপূর্ব দাস, মোঃ তৈয়ব শেখ, মোঃ সুমন ওরফে নুরুজ্জামান। রফিকুল ইসলাম রাজু, হায়দার আলী, ফারুক হোসেন, সেলিম মিয়া, রাজু জগন্নাথ, বসির উদ্দীন, মোঃ হাবিবুর রহমান, মনিরুজ্জামান ওরফে মুন্না, নাসিরউদ্দীন ও গিয়াসউদ্দীন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী আনিচ-উল মাওয়া বলেন, কারাবন্দীরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক রয়েছেন। কিন্তু মামলার বিচার শেষ হয়নি। ইতোপূর্বে হাইকোর্ট এসব বন্দীদের বিষয়ে যথাযথ আদেশ প্রদান করেছে। অন্যদিকে শুনানিতে আইনজীবী সৈয়দা সাবিনা আহম্মেদ মলি বলেন, রাজু ও হায়দার আলী ১৮ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অপর আসামিরাও এক যুগ ধরে কারাগারে। কিন্তু তাদের জামিন মেলেনি। মামলার বিচার শেষ হয়নি। আদালত তাদের জামিন দিতে পারে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন। সিলেট ও খুলনা বিভাগে সর্বনিম্ন ১০ বছর ও সর্বোচ্চ ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ১০ বন্দী কারাগারে থাকার বিষয়টি সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী সৈয়দা সাবিনা আহমেদ মলি। শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএইচ মোঃ নূুরল হুদা জায়গীরদারের বেঞ্চ রুল দেয়। একই সঙ্গে ১০ জনকে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয়। এরা হলেন, (১) কমলগঞ্জের মুয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের ছেলে ফরুখ হোসেন ১১ বছর ধরে কারাবন্দী। ২০০৫ সালে কেতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। সিলেট দায়রা জজ বিশেষ আদালতে তাকে ১৩১ বার হাজির করা হয়। (২) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনামুড়া গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে সেলিম মিয়া ১১ বছর ৬ মাস ধরে কারাবন্দী। ২০০৫ সালে দক্ষিণ সুরমা থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে সিলেট অতিরিক্তি দায়রা জজ আদালতে ১২২ বার হাজির করা হয়েছে। (৩) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বেগমখালের বাসিন্দা মৃত পা-ে জগন্নাথের ছেলে রাজু জগন্নাথ ১৩ বছর ৭ মাস ধরে কারাবন্দী। ২০০৩ সালে রাজুর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। তাকে এখন পর্যন্ত ১১২ বার বিশেষ দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। (৪) তাহিরপুর কাউকান্দি গ্রামের উস্তার গনির ছেলে বশির উদ্দিন (৫৩) ১৩ বছর ধরে হত্যা মামলায় কারাবন্দী। ২০০৩ সালে তাহিরপুর থানার মামলায় তাকে ৮১ বার সুনামগঞ্জ দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। (৫) জামালপুর জেলার চর চড়সী গ্রামের বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল ১১ বছর ধরে কারাগারে বন্দী। তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। (৬) সাতক্ষীরা পশ্চিমপাড়ার ইটাগাছা থানার বাসিন্দা মৃত কেরামত আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান মুন্না ১১ বছর ধরে কারাবন্দী। ২০০৫ সালে তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়। (৭) সাতক্ষীরার ইসলামপুরের দলিল উদ্দিনের ছেলে নাসিরুদ্দিন ১১ বছর ধরে সাতক্ষীরার জেলা কারাগারে বন্দী। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ২০০৫ সালে মামলা হয়। (৮) সাতক্ষীরার ওমর আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন ১১ বছর ধরে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১১ বছর ধরে কারাবন্দী। ২০০৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
×