ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্বরতা!

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বর্বরতা!

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সালমা আক্তার সুমী নামে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তাতে সভ্যতার শিউরে ওঠারই কথা। কোথায় চলেছে আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ধ্বজাধারী সমাজ! সুমীকে এক মাস ঘরে আটক রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় স্বামী-সতীন, দেবরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে তার চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে ও বেঁধে রেখে অপমান এবং লাঞ্ছিত করা হয়। বিয়ের পর থেকেই সে নিপীড়নের শিকার। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার এলাকায় বিচার-সালিশ হওয়ার পর কিছুদিন নির্যাতন বন্ধ ছিল। গত এক মাস ধরে ঘরে আটকে রেখে ফের নির্যাতন চালানো হয়। ওই রূপগঞ্জেই স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পাখি বেগম নামে অপর এক গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে শুধু যৌতুক আদায় করা যায়নি বলে। ক’দিন আগেই আমরা সম্পাদকীয়তে লিখেছি- এ যুগে বাস্তব কোন দৃষ্টান্তে নয়, ‘যৌতুক’ শব্দটি শুধু অভিধানেই পাওয়ার কথা ছিল। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আজও দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের বলি হচ্ছেন নারীরা। কুষ্টিয়ায় যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে লাইলি খাতুন নামের এক গৃহবধূর শরীর আগুনে ঝলসে দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে গ্রামবাংলার বিবাহিত নারীদের ওপর এখনও অভিশাপ হিসেবে ছায়া বিস্তার করে চলেছে যৌতুক আদায়ের বর্বরতা। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারীসমাজকে বাঁচাতে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে কম উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যৌতুকের বিরুদ্ধে আছে শক্ত আইন, যৌতুকের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও নেয়া হয়েছে নানামুখী কর্মসূচী। কিন্তু যৌতক প্রথা দূরীকরণে এখনও কাক্সিক্ষত ফল লাভ সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই যৌতুকের বলি হচ্ছে নারীরা। যৌতুক দিতে না পারার কারণে গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না সময়মতো। হলেও পাচ্ছে না যোগ্য পাত্র। আবার বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চলছে অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন। অনেকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (ইউএনডিপি) পরিচালিত সিস্টেম অব ডাওরি ইন বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের যৌতুক প্রথার ওপর ১০ বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৫০ ভাগ বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। প্রতিবছরই যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। যার সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। যৌতুক কেবল গরিবের ঘরে নয়, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, ধনী সব ধরনের পরিবারেই ছড়িয়ে আছে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মনে করে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতা অনেক উচ্চশিক্ষিত পুরুষের মাঝেও আছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলেই সমাজের বহু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে সমাজের এই অন্যায়-অনাচার দূর করা সম্ভব নয়। যৌতুকবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে যৌতুকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন। যৌতুকলোভীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং সমাজে তাদের বয়কট করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সতর্কতা ও সচেতনতামূলক প্রচারও দরকার।
×