ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অর্জন ॥ চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

২০১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অর্জন ॥ চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ

অনেক দিন ধরে বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (ধৎঃরভরপরধষ রহঃবষষরমবহপব) ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এর সম্ভাব্য ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে প্যাথলজির সøাইড, এক্স-রে, ত্বকের ক্ষত এবং চোখের রেটিনার সমস্যা নির্ণয়ের কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আরও বাড়বে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের জন্য ৯০ টিরও বেশি কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। আইবিএম, এ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফট এক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। শরীরে পরিধেয় সেন্সর শরীরে পরার মতো সেন্সর (অফাধহপবফ ডবধৎধনষব ঝবহংড়ৎং) উদ্ভাবনায় ২০১৬ সাল একটি সফল বছর। এগুলো এমন এক ধরনের যন্ত্র যা ঘড়ি কিংবা বেল্টের মতো শরীরে পরে থাকলে রক্তের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ জানা যাবে। অবিরাম রক্তের গ্লুকোজ, এ্যালকোহল কিংবা ল্যাক্টেট পরিমাপ করার মতো সেন্সর এ বছর তৈরি হয়েছে এবং সফলভাবে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্যানসারের তরল বায়োপসি কারও ক্যানসার হলে তার রক্তে টিউমার ডিএনএ ভাসমান থাকে। রক্তের টিউমার ডিএনএ শনাক্ত করার প্রক্রিয়াকে তরল বায়োপসি বা লিকুইড বায়োপসি (খরয়ঁরফ ইরড়ঢ়ংু ভড়ৎ ঈধহপবৎ) বলা হয়। সাধারণত ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গের বায়োপসি করে পরীক্ষা করা হয়। এর জন্য শল্যকর্মের প্রয়োজন হয়। কিন্তু রক্তের টিউমার ডিএনএ শনাক্ত করা সহজ এবং ঝামেলামুক্ত। এ পর্যন্ত পঞ্চাশেরও বেশি ধরনের টিউমার ডিএনএ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এরফলে আগামীতে যাদের ক্যানসারের লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশিত হয়নি তাদের ক্যানসারও টিউমার ডিএনএ-র সাহায্যে শনাক্ত করা যাবে। ভার্চুয়াল হাসপাতাল বা বিছানাবিহীন হাসপাতাল টেলি-মেডিসিনের অগ্রগতির ফলে এখন হাসপাতালের চেহারা বদলে যাচ্ছে। এ বছর আমেরিকার সেন্টলুইসে প্রথম ভার্চুয়াল হাসপাতাল বা বিছানাবিহীন হাসপাতাল চালু হয়েছে। ৩৩০ জন চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে এই হাসপাতাল কমিউনিটিতে দূর-দূরান্তের হাজার হাজার রোগীর দেখাশোনা করছে। এছাড়া এখন টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে বহির্বিভাগের রোগীও দেখা হচ্ছে। ডিএনএ সম্পাদনা ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর চীনে প্রথমবারের মতো ফুসফুসের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর জন্য ঈজওঝচজ এবহড়সব ঊফরঃরহম-এর সাহায্য নেয়া হয়েছে। ঈজওঝচজ এবহড়সব ঊফরঃরহম একটি নতুন ধরনের জিন প্রযুক্তি। এর সাহায্যে রোগের মূল জিনটি শনাক্ত করে প্রয়োজন মতো কেটেছেঁটে বাদ দেয়া যায় এবং সেখানে ভাল জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। এটাকে বলা যায় ডিএনএ কাটাকুটি করার কাঁচি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ঈজওঝচজ এবহড়সব ঊফরঃরহম প্রযুক্তি দিয়ে কি কি রোগের চিকিৎসা করা যাবে তা নিয়ে ট্রায়াল শুরু হয়েছে। স্মার্টফোন ইকোকার্ডিওগ্রাফি ২০১৫ সালে স্মার্টফোন দিয়ে আলট্রাসোনো করা আরম্ভ হয়েছিল। এ বছর আরেক ধাপ এগিয়ে স্মার্টফোন ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা শুরু হয়েছে। ২০১৬ সাল ছিল স্টেথোস্কোপ আবিষ্কারের ২০০ বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসকদের গলায় ঝুলানো স্টেথোস্কোপ ছিল চিকিৎসা কর্মে নিয়োজিত থাকার প্রতীক এবং রোগীদের আস্থার আশ্রয়। বুকের ভেতরের সবকিছু শোনা (এবং দেখার) জন্য বলা যায় স্টেথোস্কোপের চেয়ে এখন সত্যিকারের এক উন্নত প্রযুক্তি চিকিৎসকদের হাতে। অচিরেই স্টেথোস্কোপের পরিবর্তে চিকিৎসকদের গলায় স্মার্ট-ইকোফোন ঝুলতে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পকেটে প্যাথলজি ল্যাবরেটরি অনেক সংক্রামক রোগ দ্রুত শনাক্ত করার জন্য সুলভ ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দরকার হয়। আজকাল এরজন্য গ্রামাঞ্চলে বহনযোগ্য ল্যাব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইম্পেরিয়াল কলেজ এমন এক ধরনের ডিসপোজেবল ইউএসবি মেমোরি স্টিক আবিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে যা এক ফোঁটা রক্ত থেকেই এইডস ভাইরাসের মাত্রা নির্ণয় করতে পারবে। মনে করা হচ্ছে অচিরেই এই ধরনের প্রযুক্তি আরও অনেক রকম জীবাণু সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারবে। অর্থাৎ বলা যায় প্যাথলজি ল্যাবরেটরি এখন পকেটে বহনযোগ্য। ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা শনাক্ত করার জন্য জেনোমিকস ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভেরিতাস জেনেটিক্স কোম্পানি জানিয়েছে তারা মাত্র ৯৯৯ ডলারে পূর্ণ-জেনোম সিকোয়েন্সিং করবে। অনেকদিন ধরে ১০০০ ডলারে পূর্ণ-জেনোম সিকোয়েন্সিং করার আশা করা হচ্ছে। ভেরিতাস কোম্পানি সেই লক্ষ্য পূর্ণ করার প্রথম আশ্বাস দিল। যাদের পরিবারে ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস আছে তারা সাধারণ জন্মসূত্রে এর জিন বহন করেন। এমন ৩০ রকমের জিন শনাক্ত করার পরীক্ষা করতে এখন খরচ পড়ে ২৪৯ ডলার। কয়েকটি কোম্পানি অন্য আরও কিছু ক্যানসার জিন সুলভে শনাক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ক্যানসার জিন শনাক্ত করার প্রক্রিয়া এখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সক্ষমতার নাগালে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। মাইক্রোফ্লুয়িড চিপস এবং এক ফোঁটা রক্ত এক ফোঁটা রক্ত দিয়ে স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত নির্ভুল প্যাথলজিকাল পরীক্ষা করার প্রতিশ্রুতি অনেক কোম্পানিই দিয়েছে। কিন্তু এতদিন তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ বছর জেনালাইট (এবহধষুঃব) কোম্পানি সম্ভবত অনেকদূর এগিয়েছে। তারা অনেক জটিল প্যাথলজিকাল পরীক্ষা মাইক্রোফ্লুয়িড প্রযুক্তির সাহায্যে সুলভে দ্রুত নির্ভুলভাবে করতে সক্ষম হয়েছে। অচিরেই এই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যথা, ভয় এবং আছাড় খাওয়া প্রতিরোধে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’ (ারৎঃঁধষ ৎবধষরঃু) অবশেষে বাস্তবে রূপ লাভ করছে। ২০১৪ সালে ‘ফেসবুক’-এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ যখন ‘অকুলাস রিফট’ কিনলেন, সেদিন সকলেই বুঝে নিয়েছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বাস্তব হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটা যে ক্রমশ চিকিৎসা জগতেও প্রবেশ করবে এমন ধারণা কারও ছিল না। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কম্পিউটার গেমস-এর জগত থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন চিকিৎসা জগতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এ বছর ‘খধহপবঃ’-এ প্রকাশিত একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে আছাড় খাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ব্যথা কমানো, ফোবিয়া দূর করা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করা যাবে। চিকিৎসা ছাড়া মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বড় রকমের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্ভাবনা সত্যিই আমাদের কল্পনার ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। ডাঃ শাহজাদা সেলিম এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ) সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ফোন : ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭ ঊসধরষ: ংবষরসংযধযলধফধ@মসধরষ.পড়স
×