ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবির তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবির তীব্র প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ন্যায়বিচারের ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে মৌলবাদী অপশক্তির হুমকি ও ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। হেফাজতের হুমকির বিরুদ্ধে সরকার বা উচ্চ আদালত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে নাÑ এমন অভিযোগ এনে এ ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারব্যবস্থার প্রতি হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার সংগঠনটির পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হেফাজতে ইসলাম এবং তাদের সহযোগীরা সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ন্যায়বিচারের ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে একের পর এক যেভাবে হুমকি দিচ্ছে- সরকার কিংবা উচ্চতর আদালত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে আরও বলা হয়, হেফাজতপ্রধান আহমদ শফীসহ এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নেজামে ইসলামী ও ঘাতক ‘মুজাহিদ বাহিনী’র সদস্য ছিলেন। আমরা যখন এসব ঘাতক সংগঠনের বিচার দাবি করছি তখন তারা সর্বোচ্চ আদালতে হামলার হুমকি দিচ্ছে যা আমরা বরদাশত করতে পারি না। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, হেফাজতের এই হুমকি দেশের মানুষ যে কোন মূল্যে প্রতিহত করবে। সংগঠনটির পক্ষে অইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারব্যবস্থার প্রতি হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে আমরা আরও অনুরোধ জানাব- যুদ্ধাপরাধীদের আপীল দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। একই সঙ্গে জঙ্গী মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যাবতীয় হুমকি ও হামলা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রীমকোর্টে স্থাপিত ভাস্কর্যকে হেফাজতিরা মূর্তি বা প্রতিমা বলছেÑ যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক নির্জলা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এই ভাস্কর্য জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহু দেশের উচ্চতর আদালতে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। যে ইরানে ইসলামী হুকুমত ও শরিয়া আদালত বিদ্যমান রয়েছে সেখানেও উচ্চতর আদালতের দেয়ালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘জাস্টিসিয়া’ ভাস্কর্য খোদাই করা রয়েছে। সৌদি আরব, মিসর, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াসহ বহু মুসলমানপ্রধান দেশে ভাস্কর্য রয়েছে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য। হেফাজতিরা সুপ্রীমকোর্টের ভাস্কর্য অপসারণের নামে আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সেখানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ দেশের সর্বোচ্চ এই আদালত ’৭১-এর শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদ- দিয়েছে যার কয়েকটি ইতোমধ্যে কার্যকরও হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষে এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেনÑ বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ক্যাপ্টেন শিহাবউদ্দিন বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব), ডাঃ আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, কবি রুবী রহমান, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
×