ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজ গ্রামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ ॥ শোকস্তব্ধ হাওড়ের জনপদ

ভাটি বাংলার অনন্য নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শোকার্ত মানুষের শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভাটি বাংলার অনন্য নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শোকার্ত মানুষের শ্রদ্ধা

এমরানুল হক চৌধুরী, সালাম মশরুর, সুনামগঞ্জ ও সিলেট থেকে ॥ ভাটি বাংলার প্রাণপুরুষ হিসেবে খ্যাত, দিরাই-শাল্লা আসনের আটবারের নির্বাচিত এমপি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সোমবার চোখের জলে বিদায় জানালেন বৃহত্তর সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। সোমবার বিকেলে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে আসে শাল্লা-দিরাইয়ে হাজারো শোকার্ত মানুষ। শেষ বারের এক নজর দেখতে তারা ভিড় করেন ডিসির কার্যলয় প্রাঙ্গণে স্মৃতিস্তম্ভ, শাল্লা শহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও দিরাইয়ের বালুর মাঠে। হাজারো শোকার্ত মানুষের উপস্থিতিতে আনোয়ারপুর নিজ বাসভবনে তার শেষকৃত্যাঅনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। তার একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্তের মুখাগ্নির মাধ্যমে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয়। এর আগে সুরঞ্জিতের মরদেহ হেলিকপ্টারে সুনামগঞ্জে পুলিশ লাইনস পৌঁছার পর প্রথমে ডিসির কার্যলয় প্রাঙ্গণে স্মৃতিস্তম্বের পাশে রাখা হয়। সেখানে তার মরদেহে ফুল দিয়ে সম্মান জানান সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, স্থানীয় এমপিরা সাবেক হুইপ বিএনপির ফজলুল হক আসপিয়া, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ জেলা কমান্ড, জেলা আ. লীগের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন দলের পক্ষে নেতাকর্মী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আইনজীবীবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ। তার মরদেহ নির্বাচনী এলাকা শাল্লার শাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছায় আড়াইটায়। বিকেল চারটায় দিরাই হেলিপ্যাড থেকে নেয়া হয় জগন্নাথ জিউড় আখড়ায় ধর্মীয় রীতিনীতি শেষে আওয়ামী লীগ কর্যালয়ের সামনে গার্ড অব অনার দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় দিরাই ঐতিহসিক বালুর মাঠে। তার মৃত্যুতে জেলায় তিনদিনের শোক পালিত হচ্ছে। জেলা আ. লীগের কার্যলয়ে কালো পতাকা উত্তোলন হয়েছে। চলছে এবং কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্ত উপস্থিত জনতার উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার বাবা সব সময় বলতেন দিরাই-শাল্লার সাধারণ জনগণই তার আত্মীয়। আজ এই দিনে দেখলাম আমার বাবা তার কর্মের মাধ্যমে হাজার হাজার আত্মীয় রেখে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোকে ভাসছে হাওড় জনপদ সুনামগঞ্জ। সিলেটবাসীর শেষ বিদায় ॥ সিলেটবাসী শেষবারের মতো শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বিদায় জানাল¡ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সোমবার সকাল থেকেই নামে জনতার ঢল। দশটা ৩৫ মিনিটে এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ সিলেট নেয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল মরদেহের সঙ্গে সিলেট আসে। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা সুরঞ্জিতের মরদেহ রাখা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় তার কফিন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে আসা মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টামুখী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ শাহবুদ্দিন, অর্থ ও পরিরকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিলেটে শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর ১২টার কিছু পরে হেলিকাপ্টাযোগে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সুরঞ্জিতের নিজ জেলা সুনামগঞ্জে। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানো জন্য প্রস্তুত করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রবিবার দিনভর প্রস্তুতি কাজ চলে। কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত করা হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। শ্রদ্ধা জানাতে আসা ব্যক্তিদের শহীদ মিনারে প্রবেশ নির্বিঘœ করতে কালো কাপড় মোড়ানো বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় সারিবদ্ধ পথ। কালো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় মঞ্চ। প্রবেশ পথে তৈরি করা হয় কালো কাপড়ের তোরণ। সুরঞ্জিত সেনকে শেষ বিদায় জানাতে এসে চোখের জল ফেলে আবেগের ভাব প্রকাশ করেন অনেকে। প্রবীণ এই নেতার প্রাণহীন মুখ দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা হক। এ সময় অনেক নেতাকর্মীকেই চোখ মুছতে দেখা যায়...।
×