ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধিনায়কত্ব ছাড়লেন এ্যালিস্টার কুক

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অধিনায়কত্ব ছাড়লেন এ্যালিস্টার কুক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন এ্যালিস্টার কুক। গত বছর জুলাই-আগস্টে ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ২-২এ ড্র করার পর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এরপর বাংলাদেশ সফরে ঢাকা টেস্টে হেরে ১-১এ ড্র, সমালোচনাটা আরও তীব্র হয়। ভারতে ৪-০ তে হারের পর সেটি যেন বিস্ফোরণে রূপ নেয়। চেন্নাইয়ে শেষ টেস্টের আগেই কুককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি ওঠে। তবে কুলিন ইংলিশ বোর্ড (ইসিবি) সেটি করেনি। আধুনিক সময়ের সফলতম ব্যাটসম্যানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। সোমবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কুক নিজে থেকে ঘোষণা দিলেন, ‘অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা বেশ কঠিন। তবে এই মুহূর্তে এটি সঠিক বলে মনে করছি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা, নেতৃত্ব দেয়া বেশ সম্মানের। অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়লেও খেলোয়াড় হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। ব্যাট হাতে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা থাকবে। ভবিষ্যৎ ক্যাপ্টেনকে সহযোগিতা করব।’ র‌্যাঙ্কিংয়ে যোজন পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের কাছে মিরপুর টেস্টে হারের পরই মূলত কঠিন চাপের মুখে পড়েন কুক। এরপর ভারত সফরটা ছিল অগ্নিপরীক্ষা। রাজকোটের প্রথম ম্যাচ ড্র করে ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল ইংলিশরা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরের চার টেস্টে ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। হার যথাক্রমে ২৪৬ রান, ৮ উইকেট, ইনিংস ও ৩৬ রান এবং ইনিংস ও ৭৫ রানে। প্রথম টেস্টে ১৩০ ও দ্বিতীয়টিতে ৫৪ রানের ইনিংস দুটি বাদ দিলে কুকের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও আহামরি নয়। অথচ তিনি ইংল্যান্ড ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান ও সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক তিনি, অন্যতম ভরসাও। বাংলাদেশ ও ভারতে সার্বিকভাবে দলের বাজে অবস্থা কুকের ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মিরপুর টেস্ট হারে কোণঠাসা, অধিনায়ক কুকের সঙ্গে বাংলাদেশের নামটা ভালভাবেই জড়িয়ে আছে। এ্যান্ড্রু স্ট্রস সরে যাওয়ার পর ২০১২ সালের মার্চে এই বাংলাদেশ সফর দিয়েই টেস্ট নেতৃত্বের শুরু। আর গত অক্টোবরে আলোচিত মিরপুরে ছুঁয়েছেন মাইক আথারটনের সর্বোচ্চ ৫৪ টেস্টে অধিনায়কত্বের ইংলিশ রেকর্ড। অতঃপর ভারত সফরে ৫৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৩২ বছর বয়সী কুক সেই রেকর্ডটাকে একান্তই নিজের করে নিয়েছেন। ৪-০ তে সিরিজ হারের যন্ত্রণা সঙ্গী করে ক্যাপ্টেন্সির যাত্রাটা থামিয়ে দিলেন। বাংলাদেশ সময় রোববার সন্ধ্যায় ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস বোর্ডের (ইসিবি) চেয়ারম্যান কলিন গ্রাভসকে দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন। কুকের অধীনে ৫৯ টেস্টের ২৪টিতে জিতেছে ইংল্যান্ড, হার ২২ আর ড্র ১৩টিতে। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্টে নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ডটা তারই দখলে। কুকের দায়িত্বেই ২০১৩ ও ২০১৫ এ্যাশেজ জিতে কিছুদিনের জন্য র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল ইংলিশরা। দলকে চারে রেখে বাহুবন্ধনী খুলে রাখলেন। গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডেতে জায়গা হারান। ২০১০-২০১৪ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে রেকর্ড ৬৯ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধিনায়ক থাকাকালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন কুক। জিতেছেন আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্যাপ্টেনের পুরস্কারও। বয়স ৩২। ইংল্যান্ডকে নতুন অধিনায়ক গড়ে তুলতে হবে। এখন যে কদিন আছেন নির্ভার হয়ে কেবল ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেবেন কুক। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া। ভারত সফরের ভরাডুবির পর সমালোচনার মাঝে চুপ থাকলেও দেশে ফিরে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আলাপ করে, কিছুটা ভেবেচিন্তে ইসিবির সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিলেন। বোর্ড থেকে জানানো হয়, কুকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন অধিনায়ক হিসেবে জো রুটকেই যোগ্য মনে করছেন কুক, ‘রুট ব্যাটসম্যান হিসেবে আগেই নিজের যোগ্যতা দেখিয়েছে। অধিনায়ক হিসেবেও ভাল করবে বলে মনে করি। ইংল্যান্ডের দায়িত্ব নেয়ার জন্য সেই যোগ্য ক্রিকেটার। তার মধ্যে সেটি ফুটে উঠেছে। আমার কাজ ভাল ব্যাটিং করে দলকে জেতানো, অধিনায়ককে যথাসাধ্য সাহায্য করা।’ সম্ভাব্য অধিনায়ক রুট, বোর্ড প্রধান, সবাই কুকের সিন্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। ২০০৬ সালে নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক কুকের। ১৪০ টেস্টে ৪৬.৪৫ গড়ে করেছেন ১১০৫৭ রান। সেঞ্চুরি ৩০ ও হাফ সেঞ্চুরি ৫৩টি। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের ও সর্বাধিক সেঞ্চুরি দুটি রেকর্ডই কুকের দখলে। ইংলিশ ইতিহাসে ১০ হাজার রানও নেই আর কারোই। তুমুল প্রতিভাবান কুক জাতীয় দলে আসার আগেই চারবার ইসিবির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছিলেন ২০১১ সালে, পরের বছর উইজডেনের। দুদিন আগেই সম্মানীয় কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য এম্পায়ার (সিবিই) পদকে ভূষিত হন।
×