ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন

জাহিদুল আলম জয় ॥ এর আগে দুইবার ফাইনালে মিসরের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ক্যামেরুনের। হারটা আর হ্যাটট্রিকে পরিণত করতে দেয়নি আফ্রিকান সিংহরা। রোববার রাতে গ্যাবনের লিবারভিলের স্টাডে ডি এলআমিটে স্টেডিয়ামে আরেকবার আফ্রিকান নেশন্স কাপ ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দেশ দুটি। এবার পিছিয়ে পড়েও মিসরকে ২-১ গোলে হারিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আফ্রিকান সেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করেছে ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের হয়ে গোল করেন নিকোলাস এনকলু ও ভিনসেন্ট আবুবকর। মজার বিষয় হচ্ছে, দুজনই বদলি হিসেবে মাঠে নেমে গোল করেন। আর প্রথমার্ধে মিসরকে এগিয়ে নেয়া গোলটি করেছিলেন মোহামেদ এলনিনে। ২০০২ সালে সর্বশেষ এই আসরে ট্রফি জিতেছিল ক্যামেরুন। এবার ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হয়ে পঞ্চমবার আফ্রিকান সেরা হলো দেশটি। শুধু তাই নয়, নেশন্স কাপের ফাইনালে এই প্রথম মিশরকে হারাল ক্যামেরুন। ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালে ফাইনালে মিসরের কাছে হেরেছিল রজার মিলার দেশ। মিসরের সর্বোচ্চ সাতবারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পঞ্চমবার নেশন্স কাপের শিরোপাজয়ী এখন ক্যামেরুন। ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম টুর্নামেন্টের ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও শিরোপা জয় করার রেকর্ড গড়লো কোনো দেশ। এবারের আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ক্যামেরুনের মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান বাসোগগ। অনেকটা অসম্ভবকে সম্ভব করেই আফ্রিকান নেশন্স কাপ জয়ের উৎসব উদযাপন করছে ক্যামেরুন। ম্যাচে শুধু পিছিয়ে পড়াই নয়, ইতিহাসও তাদের পক্ষে ছিল না। তাছাড়া অনেকটা নতুন দল নিয়ে মিশনে এসেছিলেন বেলজিয়ান কোচ হুগো ব্রুস। বিষয়টি তার কাছে চ্যালেঞ্জ জেতার মতোই। বেশ কয়েকজন শীর্ষ তারকাকে দল থেকে বাদ দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন ব্রুস। কড়া সমালোচনা সইতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জটা দারুণভাবেই জিতে নিয়েছেন তিনি। এখন তো ক্যামেরুনের বীরে পরিণত হয়েছেন সফল এই কোচ। গ্যাবনের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে উপচেপড়া দর্শক উপস্থিত হয়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্যামেরুনের সমর্থক। সার্থক হয়েছে তাদের এই উপস্থিতি। শিরোপা জয়ের উৎসবে যোগ দিতে পেরে ধন্য হয়েছে তারা। বলতে গেলে অনেকটা আনখোরা দল নিয়েই নেশন্স কাপের মতো টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ক্যামেরুন। দলে নাম ডাকওয়ালা কোনো তারকা ফুটবলারেরই উপস্থিতি ছিল না। লিভারপুল ডিফেন্ডার জোয়েল ম্যাটিপ, সাকলে স্ট্রাইকার এরিক চুপো মোটিংসহ আটজন নামকরা খেলোয়াড়ই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। ২৩ সদস্যের স্কোয়াডের ১৪ জনই প্রথমবারের মতো নেশন্স কাপে খেলেছেন। তবুও শেষ হাসি হেসেছে তারা। ম্যাচের ২২ মিনিটে মোহাম্মদ এলনেনির গোলে এগিয়ে যায় মিসর। মোহাম্মদ সালেহর বলটি গোলে পরিণত করেন তিনি (১-০)। দ্বিতীয়ার্ধে এসে পাল্টে যায় খেলার চেহারা। বদলি খেলোয়াড়রাই মূলত ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেন। ৫৯ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় এনকলু গোল করে ক্যামেরুনকে (১-১) সমতায় ফেরান। শেষ বাঁশি বাজার মাত্র দুই মিনিট আগে অদম্য সিংহদের এগিয়ে দেন আবুবকর (১-২)। এতেই উৎসবে মেতে ওঠে ক্যামেরুন সমর্থকরা। ম্যাচ শেষে বেলজিয়ান কোচ হুগো ব্রুস বলেন, আমি নতুন কিছু তরুণ খেলোয়াড় সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেছিলাম। সবাই ভালভাবেই কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। এখন থেকে আমরা দল হিসেবেও পরিণত হলাম। কোচের খেলোয়াড় নির্বাচন এতটাই ইতিবাচক ছিল যে, অতিরিক্তের তালিকায় থাকা ফুটবলারদের মধ্যেও ছিল দারুণ অনুপ্রেরণা। লিওর ডিফেন্ডার এনকলু ইনজুরিতে পড়া এডলফে তাইকেউর পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নেমে গোল করেছেন। অপরদিকে তুরস্কের ক্লাব বেসিকটাসের সেন্টার ফরোয়ার্ড আবুবকরও টামবের পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। জয়সূচক গোলটিও করেন সুযোগসন্ধানী এই ফুটবলার। নেশন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে ২০১৭ সালের ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের সর্বশেষ দল হিসেবে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ক্যামেরুন। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে গ্রুপ-বিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, চিলি ও অস্ট্রেলিয়ার পর চতুর্থ দল হিসেবে জায়গা করে নিল ক্যামেরুন। আগামী ১৮ জুন মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে এবারের কনফেডারেশন্স কাপ মিশন শুরু করবে হুগো ব্রুসের দল। সর্বশেষ ২০০৩ সালে কনফেডারেশন্স কাপে খেলেছিল ক্যামেরুন। সেবার রানার্সআপ হয়েছিল দেশটি।
×