ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহক স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গ্রাহক স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা বিবেচনা ও প্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী, নতুন কস্ট মডেল, কনসালট্যান্ট নিয়োগ, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল শেয়ারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে। এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) সম্প্রতি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস গাইডলাইন ও ট্যারিফ সম্পর্কিত কমিটির সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরগুলোর সম্পৃক্ততা থাকলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা করার দায়িত্ব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের। এজন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা করতে উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে বিটিআরসি ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করছে। অল্পদিনের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৭৩১ কোটি টাকার বেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে। প্রতি বছর মোবাইল ব্যাংকিং শতকরা ১০ ভাগ হারে বাড়ছে। গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। মন্ত্রণালয় এই সেক্টরকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করা জরুরী মনে করছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির সহজ ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেয়ার জন্য ই-ব্যাংকিংয়ের সুবিধাসম্পন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরের যৌথ সেবা কার্যক্রমের আওতায় ওয়েব বা আন্তর্জাতিক রিচার্জ, ই-টিকেটিং, ইনওয়ার্ড রেমিটেন্স, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, মোবাইল ব্যাংকিংসেবা পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু হয়। এরপর থেকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে চার কোটিও বেশি গ্রাহক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করছেন। তবে এই ব্যাংকিংসেবায় সঠিক নীতিমালা না থাকায় প্রতারণা বাড়ছে। শুধু তাই নয়, অর্থ পাচার ও জঙ্গীদের হাতে অর্থ চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। গ্রাহক স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে নতুন নীতিমালা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ট্যারিফ ও গাইডলাইন তৈরিতে এর আগে একটি কমিটি কাজ করেছে। কিন্তু ওই কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। নতুন করে দেয়া কমিটি সম্প্রতি একটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। নতুন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই নতুন নীতিমালা করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলম বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএসের নতুন নীতিমালার রিপোর্ট বিটিআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এখন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করবে মন্ত্রণালয়। বিটিআরসি জানিয়েছে, এমএফএসের আওতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সেবার গুণগত পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের নিরাপদ লেনদেন ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতিমালা করা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালা করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতারণা ও অবৈধ লেনদেন বন্ধ করার জন্য অধিকতর বাস্তবসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য গাইডলাইন প্রণয়নে সুপারিশ তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর। বিটিআরসি বেশ কিছু বাস্তবসম্মত সুপারিশ তুলে ধরেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছিল। বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের ইউএসএসডি (আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা) সেবার বিপরীতে ট্যারিফ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ টেলিযোগাযোগ সেক্টরের অবকাঠামো ব্যবহার করে এসব আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা হলেও এ সেক্টর থেকে সরকারের কোন রাজস্ব আয় হচ্ছে না।
×