ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন চেয়ারম্যান নাহিদ

’৩০-এর মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে ধরে রাখা ই-নাইনের লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

’৩০-এর মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে ধরে রাখা ই-নাইনের লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২০৩০ সালে মধ্যে জেন্ডার সমতা, সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখাসহ আন্তর্জাতিক গুণগত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই হবে ই-নাইনভুক্ত নয় দেশের অন্যতম লক্ষ্য। এই সময়ের মধ্যেই বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এটি উন্নয়নশীল দেশে পরস্পরের সহযোগিতা নিয়ে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে। সোমবার রাজধানীর হোটেল রেডিসনে ‘ই-নাইন’ ফোরামের তিন দিনব্যাপী মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের লক্ষ্যসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ই-নাইনের নতুন চেয়ারম্যান বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ই-নাইন চেয়ারম্যান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতে নির্দিষ্ট ‘কর্মপন্থা’ ঠিক করেছে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল নয়টি দেশ। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হচ্ছেÑ চীন, ভারত, ব্রাজিল, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান ও স্বাগতিক বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী উপেন্দ্র কিশোর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন, ইউনেস্কোর সহকারী পরিচালক কিয়ান তান মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহেদুজ্জামান, ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কমকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার মান উন্নত করার লক্ষ্য ঠিক করতে আমরা এক জায়গায় মিলিত হয়েছি। এতে ৯ দেশের একইরকম সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, এসব দেশে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা, অর্ধেকের বেশি স্কুলের বাইরের শিশু এবং দুই-তৃতীয়াংশের বেশি নিরক্ষর যুবক ও বয়স্ক মানুষের বসবাস। অর্ধেকের বেশি মানুষ বসবাস করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশগুলোর সবাইকে সাক্ষরতার মধ্যে নিয়ে আসার মানে হচ্ছে আমরা পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলাম। সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কর্মপন্থা আমরা নিয়েছি এবং সব দেশকে একসঙ্গে নিয়ে সেটা সফল করার চেষ্টা করা হবে। ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, দ্রুত অগ্রসরমান বৈশ্বিক পরিসরে ই-নাইনভুক্ত দেশের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ, সবার জন্য শিক্ষা এজেন্ডার বাকি কাজগুলো সম্পন্নের জন্য সব দেশের সমন্বয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এ এজেন্ডার লক্ষ্য এবং এসডিজি-৪ অর্জনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য আমরা জড়ো হয়েছি। ঢাকা ঘোষণায় এসডিজি-৪ অর্জনে আন্তঃদেশীয় শিক্ষা সফর, পারস্পরিক সংযোগের ফলে অর্জিত সাফল্য নিয়ে গবেষণা, দেশগুলোর শিক্ষার অংশীজনের (স্টেইকহোল্ডারদের) মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান এবং মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এমন বৈঠকের বিষয়েও মতৈক্যে পৌঁছেছে ৯ দেশ। নুরুল ইসলাম নাহিদ আরও বলেন, ই-নাইনভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের দেশের সমস্যাগুলো অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। আমরা শতভাগ শিক্ষার্থীকে স্কুলে আনতে পারলেও ধরে রাখাটা হবে আমাদের প্রধান কাজ। ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর জন্য আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি। তবে ই-নাইন প্রকল্পের জন্য আলাদা কোন বাজেট দরকার হবে না। পাশাপাশি ইউনেস্কো এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। ই-নাইনভুক্ত দেশসমূহে ৭০ শতাংশ বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। ইউনেস্কোর সহকারী পরিচালক কিয়ান তান বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে অধিক জনসংখ্যাভুক্ত নয় দেশকে ই-নাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব দেশে উন্নত শিক্ষা প্রদানে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে সব সহায়তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে বৈঠকে অংশ নেয়া দেশগুলো কেন পৌঁছাতে পারছে না এবং কীভাবে পৌঁছানো যাবে সেটার নির্দিষ্টকরণের জন্য আমরা এক জায়গায় এসেছি। নিজেদের মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার কর্মপন্থা এখানে নেয়া হয়েছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ করবে ই-নাইনভুক্ত নয় রাষ্ট্র। যা ২০৩০ সালে মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের সাক্ষাত ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সম্মেলনের ফাঁকে হোটেল রেডিসনে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কো বাংলাদেশে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ভাল মানের শিক্ষক এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের মান উন্নয়নে নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি এক্ষেত্রে ইউনেস্কোর সহযোগিতা কামনা করেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরা শিশুদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষাকে নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মিজ ইরিনা বোকোভা বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। ই-নাইন ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তিনি বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। বোকোভা প্রশিক্ষণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বাংলাদেশে ইউনেস্কোর বিভিন্ন সহায়তার জন্য মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান এবং এ সহযোগিতা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন, আরও বেশি সহযোগিতা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় বাংলাদেশে শিক্ষার উন্নয়নে সহায়ক হবে। ইউনেস্কোর সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ই-নাইন ফোরামের সভাপতি হিসেবে আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে ইউনেস্কোর সহযোগিতা কামনা করেন। সাক্ষাতকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর, প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শহিদুল ইসলামসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×