ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর পৌরসভা

৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শহর গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর বর্তমান পৌর পরিষদ। সিটি রিজিওন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরবাসীর আধুনিকমানের জীবনযাপনের লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ যশোর শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ফুটপাথসহ ড্রেন নির্মাণ, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন, পৌরবাসীর কাক্সিক্ষত পৌরপার্কের আধুনিকায়ন, আলোচিত লালদীঘি পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন, শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক চৌরাস্তা থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত অত্যাধুনিকমানের এলইডি লাইটে সজ্জিতকরণসহ শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে যশোর শহর। পৌরসভার প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, প্রযুক্তিনির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ঝুমঝুমপুরে পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। ওই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন হবে জৈব সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ। বর্জ্য থেকে শহরে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এ কারণে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য চালু করা হচ্ছে ঢাকনাযুক্ত কনটেইনার ডাস্টবিন। এ প্রকল্প চালু হলে শহরের সব আবর্জনা ঢাকনাযুক্ত স্থানে ফেলা হবে। তারপর ওই বর্জ্য নেয়া হবে শহরের ঝুমঝুমপুরের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থানে। সেখানে নির্মাণ হচ্ছে ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। পৌর সূত্র আরও জানিয়েছে, শহর পরিষ্কার রাখতে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৯০টি কনটেইনার ডাস্টবিন ব্যবহার করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ১০টি ডাম্পিং ট্রাক ওই স্থান থেকে ময়লা অপসারণ করবে। প্রকল্পের কাজের জন্য একটি বুলডোজার ও একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার হবে। ময়লা রাখার জন্য ঝুমঝুমপুরে ১৩ দশমিক ২৫ একর আয়তনের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু প্রাচীর করার কাজ চলছে। এই প্রাচীরের মধ্যে স্থাপন করা হচ্ছে কম্পোস্ট প্লান্ট, প্রি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, কন্ট্রোল ল্যান্ড ফিল সেইভ ও ইন্ট্রিগেট স্যানেটারি ল্যান্ড ফিল সেইভ। পাশাপাশি সেখানে অফিস, স্টাফ কোয়ার্টার, ট্রাক রাখার শেডও নির্মাণ হচ্ছে। যে পাঁচটি পুকুরের খনন কাজ চলছে সেখানে ফেলা হবে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের ডাস্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে ময়লা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে ২০ থেকে ৩০ টন বর্জ্য ডাম্পিং হবে। শুধু যশোর পৌরসভা নয়, ঝিকরগাছা পৌরসভাসহ নিকটবর্তী শহরসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার ময়লা বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে নেয়া হবে। ১০ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ডাম্পিং করা হবে ৪৫ টন বর্জ্য। প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের আবর্জনা থেকে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন প্লান্ট পরিচালনায় ব্যবহার করা হবে। এছাড়া সেপটিক ট্যাঙ্কের বর্জ্য থেকে উৎপাদন করে পরিবেশবান্ধব জৈব সার, যা বাজারজাত করা হবে। পাশাপাশি বর্জ্য থেকে উৎপাদিত হবে বায়োগ্যাস, যা পাইপলাইনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকার বাসাবাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ হবে। প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। শহরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র ৩ থেকে ৪ মাস বলে জানিয়েছেন, যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এটাই প্রথম এ ধরনের স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড প্রকল্প। যা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া হয়েছে। ময়লা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের নির্মাণকালীন কারিগরি দিক দেখভাল করবে ওয়েস্ট কনসার্ন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি ও যশোর পৌরসভা বলে জানিয়েছেন ওই প্রকৌশলী। প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে শহরবাসী ময়লা-আবর্জনার সমস্যা থেকে মুক্ত হবেন বলে আশাবাদী পৌর সচেতন নাগরিকদের। এছাড়া, সিআরডিপির এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরাসনের লক্ষ্য নিয়ে পৌরসভায় আধুনিকমানের ফুটপাথসহ ড্রেন এবং ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুনঃনির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এছাড়া, যশোরবাসীর বিনোদনের স্থল পৌরপার্কের আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর এই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে ফুটপাত সংস্করণ সিটিং বেঞ্চ ও পার্কের গেট নির্মাণে। এই পার্কে উল্লেখযোগ্য রয়েছে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মউৎসর্গকারী সূর্যসৈনিকদের অন্যতম যশোরের চৌগাছার কৃতী সন্তান তৎকালীন মেম্বর অব ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি (এমএনএ) মশিয়ুর রহমানকে স্মরণ করে নির্মিত ‘শহীদ মশিয়ুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ’। যা ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে উন্মোচন করা হয়। বর্তমান পৌর পরিষদ এই প্রকল্পের আওতায় সেই স্মৃতিস্তম্ভ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়া, পৌরসভার তত্ত্বাবধায়নে নগরাঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লালদীঘি দৃষ্টিনন্দন ও সংস্কার চলছে। এটি শহরের ভেতরে একমাত্র উন্মুক্ত জলাধার। দীর্ঘদিন ধরে এর চারপাশ অবৈধ দখলে ছিল। আলোচিত এ জলাধারের দৃষ্টিনন্দন ও সংস্কারে নানা পরিকল্পনা নিয়ে ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে দীঘি খননসহ চারপাশ ঘিরে তৈরি হবে ৬ ফুট প্রশস্ত ফুটপাথ। ইতোমধ্যে দীঘি ঘিরে তৈরি হয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় শহরের ব্যস্ততমের অন্যতম সড়ক চৌরাস্তা থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত অত্যাধুনিকমানের এলইডি লাইটে আলোকিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
×