ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী দলে সংঘাত-সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সরকারী দলে সংঘাত-সংঘর্ষ

সরকারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত- সংঘর্ষ-হানাহানি-মারামারি এমনকি খুনোখুনি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা এক কথায় দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। গত চার দিনে চার জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম (শিমুল) শুক্রবার মারা যান। এই খবর শুনে তার নানিও মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে পৌর মেয়রের গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে যুবলীগের দুই দলের সংঘর্ষে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুজন কর্মী গুলিবিদ্ধ এবং আরও দু’জন আহত হন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। এর আগে বুধবার রাতে খুন হন নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাত রায়। তার স্ত্রীর অভিযোগ, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরোধের জের ধরে হত্যা করা হয় তার স্বামীকে। এই নির্বাচনের পরদিন প্রভাত রায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল স্বদলীয় প্রতিপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান মডেল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাপ হাসান খানকে কুপিয়ে আহত করে স্বদলীয় প্রতিপক্ষ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির ভাষ্য মতে, গত ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় সৃষ্ট দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে ঘটেছে এই হামলার ঘটনা। ২৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার একটি জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত এবং ২২ জন আহত হন। এ রকম ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগে। খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদককে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে নিহত হন এক নিরীহ পথচারী নারী। অভ্যন্তরীণ এসব সংঘাতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মত হচ্ছে, এর পেছনে রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কারণ খুব কম। বরং অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে এলাকায় প্রভাব বিস্তার, জলমহাল, বালুমহাল, ঠিকাদারি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ অথবা জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলকে কেন্দ্র করে। ঠিকাদারি ও টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষ-হানাহানির ঘটনা অবশ্য ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যেই বেশি, যেগুলোর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতে দলের ভেতরে কিংবা বাইরে কোন ঘটনা ঘটলে দলটি কখনই নির্লিপ্ত থাকেনি; বরং ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি ঘটনার তদন্তও হচ্ছে। অন্যায় করে কেউ পার পাবে না, তা তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন! প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় সভানেত্রীও এ বিষয়ে সর্বদাই কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব পোষণ করে থাকেন। অতীতে এ নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার খবরও আছে। তবু ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতাসীন এই দলটিকে প্রয়োজনে আরও কঠোর ও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বিরোধীপক্ষ এর সুযোগ নিতে পারে। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
×