ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ॥ কেন্দ্রীয় সভাপতি

ঢাবি ক্যাম্পাসে উজ্জ্বল ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ম্লান

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাবি ক্যাম্পাসে উজ্জ্বল ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ম্লান

সোহেল তানভীর ॥ প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীবান্ধব ১৯ দফা দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ ভাল জনপ্রিয়তা অর্জন করে ছাত্রলীগ। আবাসন সমস্যা ও খাবারের মানোন্নয়নের মতো দাবির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে শোনা যায় ছাত্রলীগের প্রশংসা। এরপরই খেই হারায় ঢাবি ছাত্রলীগ। হয়ে ওঠে বেপরোয়া। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ম্লান করে দেয়। গত কয়েকদিনে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি হামলা ও একটি দিলীয় কর্মীদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। নিয়মিত কর্মসূচীতে অংশ না নেয়ার অভিযোগে কবি জসীমউদ্দীন হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। তারা ওই শিক্ষার্থীর পেটে অস্ত্রোপচারের জায়গায় লাথি মারে। এছাড়া জগন্নাথ হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীকে ও চারুকলা অনুষদে ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতাকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের বিরুদ্ধে নিজ সংগঠনের কয়েক কর্মীকে স্টাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটে। এর আগে কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দীর্ঘদিন শান্ত থাকার পর হঠাৎ ক্যাম্পাসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতারা বলছেন ক্যাম্পাস পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সাময়িক একটা বিশৃঙ্খলা হয়ে গেছে। এটা ভবিষ্যতে যাতে না হয় তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নিজ সংগঠনের কর্মীদের স্টাম্প দিয়ে পেটানোর অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়- জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউছুফ উদ্দীন খান অনুসারীদের অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লিমনের অনুসারীরা রুমে প্রায় রাতেই উচ্চস্বরে গান করেন। এতে ইউসুফ অনুসারীরা উচ্চস্বরে গান না করতে নিষেধ করলেও তারা শোনেনি। এরই জের ধরে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় ওয়াশ রুম থেকে ফেরার সময় ইউসুফ অনুসারী আতাউল নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে লিমন অনুসারীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স ঘটনাস্থলে হকিস্টিক নিয়ে এসে ইউসুফের অনুসারীদের মারধর করতে থাকেন। এতে কমপক্ষে ৯ জন আহত হন। তবে পেটানোর বিষয়টি অস্বীকার করে মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, হলের দু’গ্রুপের ছেলেরা মারামারি করছিল। আমি তাদের থামিয়েছি। তাদের মধ্যে আপোস রফা করে দিয়েছি। জগন্নাথ হলের মারামারি বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার রাত এগারোটার দিকে সরস্বতী পূজাস্থলে ডিজে পার্টির সময় জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস তার নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন। সেখানে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা গেলে উৎপল তাদের চলে যেতে বলেন। এর প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও হকিস্টিক দিয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে সাংবাদিকতা বিভাগের ৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৪ কর্মীকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও হামলার হোতা জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবন রক্ষার হরতালের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার সকালে চারুকলা অনুষদের ক্যান্টিনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রাজীব দাসের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। চারুকলা শাখা ছাত্রলীগ নেতা আফি আজাদের নেতৃত্বে নাজমুল, সুজন, রাইসুল ইসলাম অনিকসহ ছাত্রলীগের বেশ কজন কর্মী তার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, সকালে চারুকলা ক্যান্টিনে চা খেতে গেলে সেখানে ছাত্রলীগের একটি দল আমার ওপর হামলা চালায়। গেটের সামনে তারা সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে আমার জড়িত থাকার কথা বলে মারধর করে। জসীমউদ্দীন হলে মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর নাম রিফাত ইসলাম। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে রিফাত জনকণ্ঠকে বলেন, রাত নয়টার দিকে আমাকে ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা ভর্তির পেইন-স্লিপ নিয়ে হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। পেইন-স্লিপ নিতে নিজের কক্ষে এলে তার একাধিক সহপাঠী তাকে কর্মসূচীতে অনিয়মিত বলে গালিগালাজ করে। এমন চলতে থাকলে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়ে মুখে ঘুষি মারে। ভয় পেয়ে রিফাত হল থেকে বেরিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে হলে ফিরলে তাকে আবার ২১৫ নম্বর কক্ষে গেস্টরুম করতে ডেকে নেয়া হয়। রিফাত অভিযোগ করেন, গেস্টরুমে গিয়ে দেখি কয়েকজন আমার নামে বড় ভাইদের কাছে বিচার দিয়েছে। আমি বড় ভাইদের বলি, আমার পেটে কয়েক দিন আগে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কর্মসূচীতে গেলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়। তখন বড় ভাইদের নির্দেশে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের রেজাউল করিম, বাংলা বিভাগের শাকিল আহম্মেদসহ কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করেন। একজন আমার পেটের ক্ষত স্থানের সেলাইয়ে লাথি দেয়। ঘুষি দিয়ে দাঁত ও মুখ দিয়ে রক্ত বের করে ফেলে। জানা যায়, হামলাকারীরা সবাই জসীমউদদীন হল শাখা ছাক্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান গ্রুপের লোক। সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমরা সেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর একদিনও ক্লাস, ক্যাম্পাস বন্ধ হয়নি। তবে এখন কয়েকটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কাম্য নয়। যারা ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করছে ও বিশৃঙ্খলা করছে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করেছে এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে ছাড় দিইনি। ছাত্রলীগে বিশৃক্সক্ষলাকারীদের জায়গা নেই। ক্যাম্পাসে কিছু ঝামেলা হয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। ব্যবস্থা নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
×