ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের আপীল আদালতে খারিজ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের আপীল আদালতে  খারিজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের প্রবেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত দেশটির একটি আদালত ওই নিষেধাজ্ঞার স্থগিতাদেশ আরোপ করে। এরপর আদালতের নির্দেশনা বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন আপীল করলে সেটিও আদালতে খারিজ হয়ে যায়। খবর বিবিসি ও এএফপির। নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সম্পূর্ণ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা জারি থাকবে। আপীল খারিজ করে দিয়ে আদালত হোয়াইট হাউস এবং বিভিন্ন প্রদেশের আইনজীবীদের আরও বেশি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের আইনজীবীরা বলছেন, সাতটি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুরোপুরি অসাংবিধানিক। তবে বিচার বিভাগ যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার কোন এখতিয়ার অঙ্গরাজ্যগুলোর নেই। আর জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন অধিকার তাদের নেই। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের ওই নির্দেশনার পর সাত মুসলিম দেশের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের আইনী সুরক্ষা পেলে দেশ খারাপ ও বিপজ্জনক মানুষে ভরে যেতে পারে। তিনি টুইটারে জানিয়েছিলেন, তথাকথিত বিচারক আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন। আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে। এর আগে মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসংবলিত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে দেশটির বিচার বিভাগ। শনিবার বিকেলের দিকে বিচার বিভাগ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে। বিষয়টি এখন ফেডারেল আপীল আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। শুক্রবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটল আদালতের বিচারক জেমস রবার্ট ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসংবলিত নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। ফলে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার আইনী বৈধতা পেয়েছেন। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা ওই দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের তাদের ফ্লাইটে বহন করারও ঘোষণা দেয়। নির্বাহী আদেশ স্থগিতাদেশের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় বিচারক জেমস রবার্টের সমালোচনা করেন। তিনি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবেন বলেও জানান। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিচারক জেমস রবার্টকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আপীলে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। গত ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের শরণার্থীদের ৯০ দিন ও সিরিয়ায় শরণার্থী ও নাগরিকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এছাড়া সারাবিশ্বের সব ধরনের শরণার্থীকে ১২০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয় ওই আদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলফ ক্লাবের কাছে শনিবার কমপক্ষে দুই হাজার লোক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে শরণার্থী ও ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসংবলিত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলে গলফ ক্লাবে বার্ষিক রেডক্রস বল খেলা দেখতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের উইন্টার হোয়াইট হাউস এ এলাকায় অবস্থিত। বিক্ষোভকারী রব রিসেইড বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমি যুদ্ধ করেছি। বছরের পর বছর এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন আর এখন তা হরণ করা হচ্ছে। আমাদের যেসব অধিকার হরণ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। বিক্ষোভকারীরা সেøাগান দেন, এটাই কি গণতন্ত্রের নমুনা? তারা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কোন দেয়াল নয়, কোন বাধা নয়।’ গত শুক্রবার ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেন ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটল আদালতের এক বিচারক। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে ওয়েস্ট পাম বীচে শনিবার এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিশ্বের বিভিন্ন নগরীতেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে হেয়াইট হাউস থেকে ইউএস ক্যাপিটল পর্যন্ত যান। তারা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে সেøাগান দেন এবং অভিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
×