অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারে নতুন কৌশল গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, রিজার্ভ উদ্ধারে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিমত চাওয়া হয়েছে। তাদের অভিমত পেলে এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা হবে। কারণ অনেকদিন তো হয়ে গেল। চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার।
রবিবার বিকেলে সচিবালয় থেকে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে।
চুরি হয়ে ফিলিপিন্সে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরতের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। গত বছরের মার্চ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে।
এদিকে, গত ডিসেম্বরে রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে সহায়তার জন্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে চুরির সবচেয়ে বড় এ ঘটনায় বাংলাদেশের তদন্ত প্রতিবেদন চায় ফিলিপিন্স সরকার। তবে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়ার অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী ওই সময় জানিয়েছিলেন, ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষকে এটি দেয়া হবে না। রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ প্রতিবেদন তাদের দেয়া হবে না। এটা অন্যদের দিতে সরকার বাধ্য নয়। এটা কাউকেই দেয়া হবে না। বরং চুরির টাকা উদ্ধারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) বাংলাদেশের পক্ষে আইনী লড়াই করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও দেশটির পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ফিলিপিন্স অনেক বাহাদুরী দেখিয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা ॥ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেনÑ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শোকবার্তায় বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ এবং পার্লামেন্টারিয়ান। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদকে হারাল। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
