ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুরঞ্জিতের সংসদে শেষ ভাষণ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুরঞ্জিতের সংসদে শেষ ভাষণ

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গত ২৯ জানুয়ারি জীবনের শেষ বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ওইদিন পয়েন্ট অব অর্ডারে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্বের ওপর ব্যাখ্যামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের কোন দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না, সেটিই তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর সাবলীল তেজোদীপ্ত বক্তব্যে। সংসদে তাঁর শেষ বক্তব্যটি আবার নতুন করে তুলে ধরা হলো। পয়েন্ট অব অর্ডারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন তা গোটা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘসহ পৃথিবীর কোন দেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে পারে না। জাতিসংঘ যদি আমাদের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে চায় তাহলে জাতি হিসেবে আমরা খুব বিব্রত হব। আর বিএনপির এ নিয়ে আর কোন কথা থাকলে সার্চ কমিটির কাছে তা তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি। পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, নতুন ইসি গঠন ও সার্চ কমিটি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা কথা চলছে। এ ব্যাপারে আমাদের আরও সজাগ থাকতে হবে। আমরা যে যত বড় নেতাই হই না কেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির অবস্থান নিয়ে কোন কথা বলতে পারব না। একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনে বিএনপির যদি ভাল কোন প্রস্তাব থাকে, তাহলে আমরাও সেটিতে শতভাগ একমত। তিনি বলেন, বরং আমরা এখন যে চর্চা করছি সেটি আমাদের সাংবিধানিক অজ্ঞতা ও সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। কারণ সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের উর্ধে, তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আমাদের কারও নেই। সুতরাং আমি মনে করি ইসি গঠন নিয়ে যে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরে থেকেই আমাদের সামনে এগোতে হবে। প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ান বলেন, জাতিসংঘের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, তাদের কোন বক্তব্য থাকলে তারা আমাদের সংবিধানের ভেতরে থেকে বলতে পারে, এর বাইরে বলে আমাদের বিব্রত করা তাদের উচিত হবে না। তাদের কোন বক্তব্য থাকলে তারা সেটি কূটনৈতিক চ্যানেলে বলতে পারেন, তা না করে কোন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ঢোকা একেবারেই অনৈতিক হবে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত বলেন, সুযোগ এখনও চলে যায়নি। বিএনপি বলছে তারা নাকি ঘর পোড়ানো ও গরু মারা বাদ দিয়ে সাংবিধানিক রাজনীতিতে ফিরেছে। যদি ফিরেই আসেন তবে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সাংবিধানিক রীতিনীতি সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে যে ধরনের সার্চ কমিটি করেছেন- এমন সুন্দর সিদ্ধান্ত অতীতে আমি আর দেখিনি। সুতরাং এ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করে সাংবিধানিক উপায়ে বিএনপিকে কথা বলতে হবে। আমরাও আমাদের কথা রাষ্ট্রপতিকে বলে এসেছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই সেদিন বলেছেন- সংবিধানের মধ্যে থেকেই ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হবে। এর বাইরে কিছু করার ক্ষমতা রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে বিচার বিভাগের দু’জনকে রেখেছেন, যারা আগে থেকেই সাংবিধানিক শপথপ্রাপ্ত। মহাহিসাব রক্ষক ও পিএসসি’র চেয়ারম্যানও সাংবিধানিক পদ। এর বাইরে দু’জন শিক্ষক রয়েছেন যাদের প্রতিও মানুষের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কমিটি গঠনের পর দেখলাম-বিএনপি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির এই কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই। সুরঞ্জিত আরও বলেন, বিএনপিকে সাংবিধানিক রাজনীতি করতে হলে সংবিধান পড়ে-জেনেই কথা বলতে হবে। আর কমিটি গঠন নিয়েও বিএনপির দুই নেতার দুই মত। মওদুদ আহমদ বললেন- ভাল কিছু প্রত্যাশা করছি। আর দলটির মহাসচিব (মির্জা ফখরুল) বললেন- এই কমিটি গ্রহণ বা বর্জন কোনটিই নয়। এভাবে চলতে পারে না।
×