ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন চৌকস পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চলে গেলেন চৌকস পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

বিশেষ রিপোর্টার ॥ নিভে গেল সংসদীয় গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। বর্ষীয়ান রাজনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর নেই। হাজারও ভক্ত, অনুরাগী, শুভাকাক্সক্ষী রেখে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রবিবার ভোর চারটা ২৯ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। শোকার্ত রাজনীতিকরা সাত সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের জীবনাবসানকে বর্ণনা করেছেন- ‘রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের অবসান’ হিসেবে। প্রবীণ এই নেতার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাজনীতির অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। সকাল নয়টায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ হাসপাতাল থেকে ঢাকার জিগাতলার নিজ বাসভবনে নেয়া হয়। দুপুর ১২টায় মরদেহ নেয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। বেলা তিনটায় মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের পাশাপাশি এই তিন স্থানেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষবারের মতো দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গত শুক্রবার হƒদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বরেণ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শনিবার রাত ৯টায় তাঁকে সাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। রবিবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। ডাঃ বরেণ চক্রবর্তী জানান, লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শনিবার রাত ১০টার দিকে ১৫ মিনিটের জন্য তাঁর হার্টবিট ছিল না। চিকিৎসকদের চেষ্টায় পুনরায় হার্টবিট ফিরে এলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। মৃত্যুকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত ও একমাত্র পুত্র সৌমেন সেনগুপ্তসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। সুরঞ্জিতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে আজ ॥ শোকার্ত মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ রাতে ল্যাবএইডের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নেয়া হবে সিলেটে। সকাল দশটায় সিলেটে মরদেহে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর বেলা সাড়ে এগারোটায় নেয়া হবে তাঁর নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জে। সেখান থেকে মরদেহ শাল্লা নেয়া হবে দুপুর দেড়টায়। সবশেষ বেলা তিনটায় মরদেহ পৌঁছবে দিরাইয়ে। সেখানেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মাসতুতো ভাই জয়ন্ত সেন বলেন, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষ ইচ্ছা ছিল চন্দন কাঠের চিতায় তাঁর দেহ দাহ করার। জানা গেছে, নিজের হাতে রোপণ করা চন্দন গাছের কাঠ দিয়ে দাহ করা হবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। ইতোমধ্যেই চন্দন গাছটি কাটা হয়েছে এবং কাঠ আকারে বানানো হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুজিত রায় জানান, ১৪ বছর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজের হাতেই বাড়ির আঙ্গিনায় এই চন্দন গাছটি রোপণ করেছিলেন। যখনই তিনি দিরাইয়ের এই বাড়িতে যেতেন, নিজের হাতেই গাছটির পরিচর্যা করতেন । সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জাতীয় সংসদ চত্বরে বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের শ্রদ্ধা জানানোর আগে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব-সেক্টর কমান্ডার সুরঞ্জিতের প্রতি জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুরঞ্জিতের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও প্রয়াত এই সংসদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ ধ্রুবেষানন্দ মহারাজ এ সময় বিশেষ প্রার্থনা করেন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে সুরঞ্জিতের জীবনী পড়ে শোনান সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ। পরে সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন অভিভাবকহীন। তবে আমি নিজেকে অভিভাবকহীন ভাবছি না। আমাদের পরিবারের সঙ্গে সব সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন। আমাদের এই ক্রাইসিস টাইমে তিনি আমাদের পাশে থাকবেন আশা করি। আমার বাবা সারাজীবন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন। সবসময় মানুষের উপকার করেছেন। কেউ কোন সমস্যা নিয়ে গেলে তার কাছ থেকে খালি ফিরতেন না।’ জাতীয় পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কৃষক, শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে। এছাড়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী কয়েক মিনিট সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেনের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকেশ্বরীতে শেষ শ্রদ্ধা ॥ এর আগে দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অন্যান্যের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, ঐক্য ন্যাপের আহ্বায়ক পংকজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপুর নেতৃত্বে পূজা উদযাপন পরিষদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এটিএম সামসুজ্জামান, সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিম, বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার আদর্শ সাইকি, পলিটিক্যাল সেক্রেটারি রাজেশ উইকি প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সুরঞ্জিত সেনের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু একজন রাজনীতিকই ছিলেন না, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। সংসদীয় রাজনীতিতে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন দক্ষ রাজনীতিবিদকে হারালো; এই ক্ষতি অপূরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। দেশ এক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে হারালো আর আওয়ামী লীগ হারালো দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী ও সুসংহত করতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথাও স্মরণ করে বরেন, সুরঞ্জিত দেশের প্রথম সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহসহ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পরিকল্পনা মন্ত্রী আনহ মুস্তফা কামাল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ‘একটি অধ্যায়ের অবসান’॥ আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর খবরে ছড়িয়ে পড়লে সকালে হাসপাতালে ছুটে আসেন আত্মীয় স্বজনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সাবেক এই মন্ত্রীর মরদেহ সকাল ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে নেয়া হয় তার জিগাতলার বাসায়। অনেকেই সেখানে ছুটে আসেন প্রয়াত এই রাজনীতিবিদকে শেষবার দেখতে। স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ। এ সময় অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্লামেন্ট হ্যাজ লস্ট এ গ্রেট পার্লামেন্টারিয়ান। এ গ্রেট লস। সে আপাদমস্তক পলিটিশিয়ান ছিল। সংসদে দাঁড়ালেই হতো। সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর বয়স ও বাংলাদেশের পার্লামেন্টের বয়স একই। তাঁর সময়ের শুধু তোফায়েল ও হামিদ সাহেব এখনও আছেন।’ সুরঞ্জিতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ব্যতিক্রমধর্মী প্রখর যুক্তিবোধ ও হাস্যরসে পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি অনুকরণীয়। বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়কে আমরা হারালাম।’ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সংবিধান প্রণয়নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বে কেউ যদি আঘাত করার চেষ্টা করত, তাহলে উনি মন্ত্রী থাকা অবস্থাতেও তার প্রতিবাদ করতেন। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্থানীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও জিগাতলায় এসেছিলেন প্রয়াত এই সংসদ সদস্যকে শেষবার দেখতে। সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত জিগাতলার বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবার অবর্তমানে আমাদের অভিভাবক এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা সারাজীবন মানুষের উপকার করে গেছেন, এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করেছেন। আমি চেষ্টা করব বাবার শেষ কাজটুকু করে যেতে।’ এদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চলে যাওয়ায় সিলেট তো বটেই সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনেও শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আইনের বিষয়ে কোন জটিলতা তৈরি হলে সবাই তাঁর কাছে যেতেন। তিনি চলে যাওয়ায় তারমতো আস্থাভাজন লোক পেতে হয়ত আমাদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রয়াত নেতাকে আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছেন। উনাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উনি সামনের কাতারের সৈনিক ছিলেন।’ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাঁর মতো অভিজ্ঞ, সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতা বিরল। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বহুকালের। আমি তাঁকে মহৎ প্রাণের মানুষ হিসেবে জানতাম। রাজনৈতিক সঙ্কটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতেন। মানুষের মাঝে আস্থা তৈরি করতেন। এরকম একজন পার্লামেন্টারিয়ান রাজনীতির বর্ষিয়ান নেতা চলে যাওয়ায় আমি শোকাহত ও মর্মাহত। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’ ষাট দশকের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘বহুমাত্রিক গুণের ব্যক্তি ছিলেন সুরঞ্জিত।’ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। তিনি নিজের ধর্মরক্ষায় যেমন কথা বলতেন, তেমনি অন্য ধর্মকে সম্মান করতেন। সংবিধানের চার মূলনীতি ওপর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি নাম্বার ওয়ান বলে আমার মনে হয়। তাঁর মৃত্যুতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা সহজে পূরণ হবে এটা মনে করার কারণ নেই। আমরা তাঁকে শেষবি?দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিদায় অপূরণীয় ক্ষতি-শ্রিংলা ॥ আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমশিনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এক শোকবার্তায় হাইকমশিনার বলেন, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। সবশেষ কয়েকদিন আগে সংসদ প্লাজায় সরস্বতী পূজার একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাষী, দৃঢ়, বিচক্ষণ, আদর্শবান নেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি এবং শূন্যতা তৈরি করবে। বার্তায় সুরঞ্জিতের শোকাহত সহধর্মিণী জয়া সেনগুপ্ত, তার বন্ধু, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক সমবেদনা জানান হাইকমিশনার শ্রিংলা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সাংসদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনটির পক্ষে রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছেÑ ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের আন্দোলনে আমরা সব সময় সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে আমাদের পাশে পেয়েছি। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আমরা হারিয়েছি আমাদের একজন পরীক্ষিত সহযোদ্ধাকে এবং জাতি হারিয়েছে এক কৃতি সন্তানকে। সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর অভাব সহজে পূরণ হবে না।’ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্য, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জ্ঞাপন করছি।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। এছাড়া পৃথকভাবে শোক জ্ঞাপন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দক্ষ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং কৃতি সন্তানকে হারাল। তাঁর প্রয়াণ সমগ্র জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা কোনভাবেই পূরণ হবার নয়। তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। চট্টগ্রাাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য এমএ লতিফ শোক বার্তায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বলেন, এ মৃত্যু যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে তা পূরণ হবার নয়। কারণ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন অভিজ্ঞ আইন প্রণেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং অত্যন্ত প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ। বিবৃতিতে তারা প্রয়াত এ নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রবীণ এ পার্লামেন্টারিয়ানের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান ও জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রধান মমতাজ বেগম।
×