স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সাম্প্রদায়িকতা রোধে দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে একযোগে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, যখন জামায়াত-শিবির, হেফাজতসহ উগ্র-সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে, তখন রাষ্ট্র তাদের দাবি দাওয়া পূরণে ব্যস্ত। উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দাবি পূরণ করতে গিয়ে কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িকতাযুক্ত পাঠ্যপুস্তক। ফলে আগামী পাঁচ বছর পর শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আর শুনতে চাইবে না! তখন উল্টো পথে হাঁটবে দেশ। তাই সব অন্যায়ের প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ করারও তাগিদ দিয়েছেন তারা। রবিবার ‘সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, উগ্র মৌলবাদ, ’৭২ এর সংবিধান কোন পথে বাংলাদেশ?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের চার বছর পূর্তিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানীকরণের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে প্রজন্ম চত্বর থেকে আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। যা এক পর্যায়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মঞ্চের সমর্থনে পালিত হয় নানা কর্মসূচী।
দেশে উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গীগোষ্ঠীর তৎপরতার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। জামায়াতের কাজ অনেক আগেই অন্য দলগুলো করে দিয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে ‘ইসলাম’ ধর্মকে। দেশে বর্তমানে ১৩২ জঙ্গী সংগঠনের কথা উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, এসব সংগঠনের মধ্যে ৬ নিষিদ্ধ ও ৭টিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। বাস্তবতা হলো নিযবুত, জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন এখন বাংলাদেশ থেকে আল কায়েদা ও আইএসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তারা ১৩২ সংগঠনকে একটি প্ল্যাট ফরমে আনতে চায়। দ্রুত উগ্রবাদী শক্তির বিকাশ যেভাবে হয়েছে সেভাবে প্রগতিশীল শক্তির বিকাশ হয়নি। তাই দেশে বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। অর্থনীতি পুরোটাই দুর্বৃত্তায়িত।
দেশ আজ উল্টো পথে হাঁটছে এমন মন্তব্য করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেন, সংবিধানের পথে দেশকে এগিয়ে যেতে দেয়া হয়নি। নানা কায়দা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এর সর্বশেষ সংযোজন হলো পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতা করণ। তিনি বলেন, সরকার হেফাজতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এটা তো হতে পারে না। সাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক বাতিল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণের দাবিতে প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামব। ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী বলেন, হেফাজতের দাবি দাওয়া উপেক্ষা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।