ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ল্যান্ডিং স্টেশনে নিম্নমানের অবকাঠামো ঝুঁকি

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযোগ স্থাপন পিছিয়ে গেল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযোগ স্থাপন পিছিয়ে গেল

ফিরোজ মান্না ॥ বহু প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৫ সংযোগ স্থাপন এ মাসেও হচ্ছে না। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনে নিম্নমানের অবকাঠামো ঝুঁকি থাকায় কনসোর্টিয়াম সংযোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশে ১ হাজার ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আসবে। প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দেশে মাত্র ১২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আসছে। বিকল্প কেবল হিসেবে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল বড় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) অনিয়মের কারণে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ পেতে দেরি হচ্ছে। গত মাসে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সংযোগ স্থাপনের কথা ছিল। সাবমেরিন কেবল কোম্পানি জানিয়েছে, সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হলেও বিদ্যুত সংযোগের জন্য রিপিটার স্থাপন ও ‘ফাইন টিউনিং’এর কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। ফলে কেবল সংযোগ চালুর চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ সম্ভব হচ্ছে না। বিটিসিএলের এক অভ্যন্তরীণ চিঠিতে বলা হয়, ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় আরও প্রায় ছয় মাস সময় প্রয়োজন। ১৯ দেশের সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। কনসোর্টিয়ামকে ৬৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা দিয়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করতে হয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬৬ কোটি টাকা দেয়া হয় আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) দিয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা। বাকি ৩৫২ কোটি টাকা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক থেকে (আইডিবি) ঋণ সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। বিকল্প আরেকটি কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ আনার জন্য সি-মি-উই-৫ নামের নতুন কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সি-মি-ইউ-৪-এর (সাউথ এশিয়া-মিডেলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) কেবলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এই কেবলের মালিক হচ্ছে ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর, ইতালী, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ নতুন কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিক ১৯টি দেশ। কনসোর্টিয়াম ২০ হাজার কিলোমিটার সি-মি-উই-৪ কেবলের ‘আপগ্রেডেশন’ বা উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন দেশে বাড়তি ১৬০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মাত্র ৪৪ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়া যেত। বাড়তি ১৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পেতে ৫০ কোটি টাকা কনসোর্টিয়ামকে বিএসসিসিএলের পরিশোধ করতে হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়াম কর্তৃপক্ষ ২১ ফেব্রুয়ারি সংযোগ চালুর কথা জানালেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চলতি মাসেই চূড়ান্ত তারিখ হতে পারে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হতে বাংলাদেশ ল্যান্ডিং স্টেশন করেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। এখান থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলের মাধ্যমে ঢাকায় ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হবে। প্রাথমিকভাবে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ঢাকায় আনার কথা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেড় বছর আগে ল্যান্ডিং স্টেশন প্রস্তুত থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ শেষ হয়নি। ১০ একর জায়গায় ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে তিন বছর আগে। অবকাঠামোর গুণগতমান এতই নিম্নমানের যে, বিনা কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময় ল্যান্ডিং স্টেশনের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ে। এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও দায়ীদের চিহ্নিত করা হলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঠিকাদারকে বিল দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেয় বিএসসিসিএল। ফলে সাগরে কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হলে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। অবকাঠামো নির্মাণ কবে শেষ হবে এ বিষয়ে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির কেউ কিছু বলতে পারেনি। বিষয়টি জানার জন্য সাবমেরিন কেবল কোম্পানির এমডি মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এদিকে সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়াম কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, গত ১৩ ডিসেম্বর সমুদ্রের তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এই কেবলে বিদ্যুত সংযোগের জন্য রিপিটার বসানোর কাজ করছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘এনইসি’। নির্দিষ্ট দূরত্বে বেশ কয়েকটি রিপিটার স্থাপন করতে হচ্ছে। রিপিটার স্থাপন এবং সেখানে উচ্চমাত্রার বিদ্যুত সংযোগের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের দূরত্ব অনুযায়ী রিপিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×