ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় নিষিদ্ধ সংগঠনও বিভিন্ন নামে সক্রিয়

কালো তালিকাভুক্ত ২০ জঙ্গী সংগঠনের গোপন তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কালো তালিকাভুক্ত ২০ জঙ্গী সংগঠনের গোপন তৎপরতা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্তমান সরকারের জঙ্গী-সন্ত্রাস বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পর জঙ্গী-সন্ত্রাসী হিসেবে নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোর সদস্যরা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এর পাশাপাশি নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করে নিজেদের চাঙ্গা করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী এসব জঙ্গী সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য জামায়াত-শিবির থেকে আসা। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী মৌসুমী আবাসিক এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গোপন বৈঠক চলাকালে কালো তালিকাভুক্ত ‘ইসলামী সমাজ’ নামের সংগঠনটির যে ২৪ সদস্য গ্রেফতার হয়েছে এদের অধিকাংশ জামায়াত-শিবির থেকে আসা বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানানো হয়েছে। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে এ ধরনের বেশকিছু সংগঠনের গোপন তৎপরতায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরীর, হরকত উল জিহাদ (হুজি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। উল্লেখ্য, সরকার এ পর্যন্ত যেসব জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে শাহাদাত-ই আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হিযবুত তাহরীর এবং সর্বশেষ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে সক্রিয় কিছু সংগঠনের তালিকা। এর মধ্যে আল্লাহর দল, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, তামির উদ্দিন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, হিযবুত তাওহীদ, শাহাদাত-ই নবুয়ত, জামায়াত-আস-সাদাত উল্লেখযোগ্য। প্রসঙ্গত, সরকার যখনই কোন জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে তখন এরা অন্য ব্যানারে নাম দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতায় সক্রিয় হয়। এ ধরনের নামের সন্ত্রাসী দলের কমতি নেই। এসব জঙ্গী সন্ত্রাসী সংগঠনের তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষায়িত টিম কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে এরা প্রকাশ্য থেকে গোপনে গিয়ে নতুনভাবে নিজেদের সংগঠিত করার তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী তৎপরতা লক্ষণীয় নয়। কিন্তু এদের বহু সদস্য এসব নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। মূলত এদের পরিকল্পনায় এসব জঙ্গী সংগঠনের কৌশল নির্ধারিত হচ্ছে। শহীদ হামজা ব্রিগেড চট্টগ্রামেই জন্ম নেয়া একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এ সংগঠনের একজন বাদে সকল শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে। কর্মী বা সমর্থকরা রয়েছে গোপনে। গোপনে থেকেই এরা অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ করে এবং সময় সুযোগ বুঝে হামলার পথ খুঁজে। ইতোপূর্বে বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ের গহিনে জঙ্গীদের ট্রেনিংয়ের আস্তানা আবিষ্কার ও অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এদিকে বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত এসব জঙ্গী সংগঠনের নেতৃত্বদানকারীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সদস্য সংগ্রহ করে দলে অন্তর্ভুক্ত করছে। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসব নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত সংগঠনের শাখার বিস্তৃতি ঘটছে। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যানুযায়ী, বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার ওপার থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ভারতীয় ও মিয়ানমারের বেশকিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্ত্রের চালান এসে থাকে। অস্ত্র চালানী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অস্ত্র চলে আসছে প্রথমে চট্টগ্রাম। পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এছাড়া মহেশখালীতে প্রায় সময় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। সেখানে দেশীয় পদ্ধতির অস্ত্র তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব অস্ত্রের একটি অংশ জঙ্গী সন্ত্রাসে লিপ্তদের কাছে চলে আসে। জঙ্গী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সরকারী অবস্থান প্রতিনিয়ত কঠোর হতে থাকলেও এগুলোকে সম্পূর্ণভাবে থমকে দেয়া যাচ্ছে না। এসব সংগঠনগুলোর প্রতিটি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যানারে তৎপর রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযানে এদের অনেককে গ্রেফতার করেছে সত্য, কিন্তু পরবর্তীতে এরা ছাড়াও পেয়ে যায়। তবে যারা চিহ্নিত এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার বড় ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি চিহ্নিত হয় তারা সহজে ছাড়া পায় না। তবে জেল অভ্যন্তরে থেকে এদের সংগঠন পরিচালনার খবরও রয়েছে। জঙ্গী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ফলে এদের শক্তি এবং অস্ত্র ভান্ডার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।
×