ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণ অস্ত্রবিরতির আহ্বান ॥ ট্রাম্প-পোরোশেঙ্কো প্রথম ফোনালাপ

পূর্ব ইউক্রেনে সংঘর্ষে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পূর্ব ইউক্রেনে সংঘর্ষে উদ্বেগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘর্ষ বন্ধে তিনি কিয়েভ ও মস্কোর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন। ফোনালাপের পর পোরোশেঙ্কোর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং মানবিক পরিস্থিতির অবনতিতে দুই পক্ষই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দুই নেতাই পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রবিরতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারে আলোচনা করেছেন। খবর ইয়াহু নিউজ ও বিবিসির। ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর এই ফোনকলের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দুই নেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হলো। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রায় তিন বছর ধরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারী বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সঙ্কটের কোন সুরাহা হচ্ছে না। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিপ্রায় কিয়েভকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর আগে শনিবার দেশটির পূর্বাঞ্চল লুহানস্কে রুশপন্থী বিদ্রোহী বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার ওলেগ আনাশচেঙ্কো গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন। তিনি স্বঘোষিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (এলএনআর) কার্যত প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বিদ্রোহীদের অভিযোগ, এ হামলায় ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত। কিয়েভ অবশ্য গাড়িবোমা হামলায় অন্তর্ভুক্তির কথা অস্বীকার করেছে। সিনিয়র কমান্ডার নিহত হওয়ার পর শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সঙ্কট নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, আমরা সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ইউক্রেন, রাশিয়া ও সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করব। ক্রিমিয়া লড়াই ও ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের প্রকাশ্য প্রশংসা এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে নির্বাচনী অঙ্গীকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে, কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে আনাশচেঙ্কোর মৃত্যু হতে পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলএনআর ও প্রতিবেশী স্বঘোষিত দনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিএনআর) বেশ কয়েকজন বিখ্যাত কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ সহিংসতায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আভদিভকা শহরের কাছে রণাঙ্গন থেকে হাজার হাজার মানুষ সরে গেছে। বরফশীতল ঠা-ার মাঝে তারা বিদ্যুত ও পানি সঙ্কটে ভুগছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন বিদ্রোহীদের নিয়ে গত বুধবার অস্ত্রবিরতি ও রবিবারের মধ্যে আভদিভকা থেকে ভারি অস্ত্র প্রত্যাহারের প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত ছিল। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল ক্রিমিয়াকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘর্ষ দেখা দেয়। ২০১৫ সালে এ সংঘর্ষ থামানোর লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু বারবার তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। সর্বশেষ অস্ত্রবিরতি শুরু হয় ২৩ ডিসেম্বর। রাশিয়া বলছে, পশ্চিমা সমর্থন নিশ্চিত করতেই ইউক্রেন সর্বশেষ সংঘর্ষ শুরু করেছে। তবে কিয়েভের অভিযোগ, সঙ্কট নিয়ে নয়া মার্কিন প্রশাসনের অভিপ্রায় যাচাই করতে ক্রেমলিন সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। ট্রাম্প বলেন, পুতিনের প্রতি তার সম্মান তার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। ট্রাম্প শনিবার ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি অনেক লোককে সম্মান করি। তিনি (পুতিন) তার দেশের নেতা। আমি বলছি, রাশিয়ার সঙ্গে না থাকার চেয়ে থাকাটাই ভাল।’
×