ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি মিসর-ক্যামেরুন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি মিসর-ক্যামেরুন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুয়ারে এসে গেছে কাক্সিক্ষত সেই ক্ষণ। আজ রাতেই জানা যাবে আফ্রিকান ফুটবলের রাজা কে? কেননা চলমান আফ্রিকান নেশন্স কাপ ফুটবলের ফাইনাল মহারণে গ্যাবনের লিবারভিলে মুখোমুখি হচ্ছে আসরের সবচেয়ে সেরা সাফল্যের দুই দেশ মিসর ও ক্যামেরুন। আফ্রিকান নেশন্স কাপের ইতিহাসে বিগত ৬০ বছরে মিসর ও ক্যামেরুনই সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাতবার শিরোপা জয় করেছে নীল নদের দেশ মিসর। আর আফ্রিকান সিংহ ক্যামেরুন জিতেছে চারবার। যদিও এবারের আসরে ফেবারিটের তকমা ছিল আলজিরিয়া, সেনেগাল ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আইভরিকোস্টের ওপর। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে ট্রফির দ্বৈরথে উঠে এসেছে ক্যামেরুন ও মিসর। ফাইনালে মিসরীয়দের অতীথ রেকর্ড বেশ সমৃদ্ধ। আটবার নেশন্স কাপের ফাইনালে অংশ নেয়া দলটি শিরোপা জিতেছে সাতবার। ফাইনালে হেরেছে মাত্র একবার। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে দুইবার অংশ নিয়ে দুইবারই জিতেছে তারা। অতীতের এই পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, এবারের ফাইনালেও ফেবারিট মিসর। তবে ক্যামেরুনও ছেড়ে কথা বলবে না। আগের দুইবারের হারের প্রতিশোধ নেয়ার মধুর সুযোগ তাদের সামনে। নয় বছর পর আফ্রিকান নেশন্স কাপের ফাইনালে উঠেছে ক্যামেরুন। আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আফ্রিকান সিংহরা ২-০ গোলে হারায় ঘানাকে। ১৫ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে দেশটি। ২০০৮ সালের আসরের ফাইনালেও একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল মিসর-ক্যামেরুন। সেবার ১-০ গোলের জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মিসর। আর বারকিনা ফাসোকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ২০১০ সালের পর নেশন্স কাপের ফাইনালে উঠেছে মিসর। ২০০৬ থেকে ২০১০ টানা তিন শিরোপা জেতার পর মিসর পরের তিন আসরে খেলতে পারেনি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। তবে চলমান আসরে খেলতে এসেই ফাইনালে উঠেছে তারা। তাদের সামনে রেকর্ড অষ্টম শিরোপা জয়ের হাতছানি। অন্যদিকে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন। ২০০৮ সালে সর্বশেষ ফাইনালে খেলেও জিততে পারেনি শিরোপা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছিল মিসরের ফুটবল। অবশেষে আবারও জেগে উঠেছে তারা। এবার শিরোপা জিতে ফের কক্ষপথে ফেরার লক্ষ্য দেশটির। আর্জেন্টাইন কোচ হেক্টর কুপারের নেতৃত্বে দলটি আবারও স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে এনেছে। কুপারের দলটি তারুণ্যনির্ভর। তবে এল হেদারির মতো ২০১০ সালের শিরোপা জয়ী দলের চারজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও এই দলে আছে। অভিজ্ঞ বাকিরা হলেনÑ আহমেদ ফাতি, মোহাম্মদ আবদেল শাফি ও হালসিটির উইং ব্যাক আহমেদ এলমোহাম্মদি। দলটি তাদের দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগের কল্যাণেই ফাইনালে উঠে এসেছে। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত মিসর একটি মাত্র গোল হজম করেছে। আর আক্রমণভাগে আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ সালেহ। ফাইনাল নিয়ে দলের অভিজ্ঞ ফুটবলার এল মোহাম্মদি বলেন, যেভাবে আমরা ফাইনালে উন্নীত হয়েছি, তা এক কথায় অসাধারণ। এখন শিরোপা জয় করতে পারলে সেটি হবে অসামান্য অর্জন। একটি মাত্র লক্ষ্য নিয়েই আমরা নেশন্স কাপে খেলতে নেমেছিলাম। সেটি হচ্ছে জয়ের মাধ্যমে আফ্রিকান নেশন্স কাপটি ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসা। শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে সেটি জাগ্রত আছে। অন্যদিকে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়ে এবারের আসরে এসেছে ক্যামেরুন। বেলজিয়ান কোচ হুগো ব্রুসের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ ফুটবল তারকা চলতি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। তারপরও স্বাগতিক দল ছাড়াও সেনেগাল ও ঘানার মতো দলকে পেছনে ফেলে ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে অদম্য সিংহরা। ক্যামেরুনের বর্তমান দলে কোন তারকা ফুটবলার নেই বললেই চলে। এরপরও দলীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে তারা। এখন শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ার প্রত্যয় দলটির। ক্যামেরুন কোচ হুগো ব্রুস বলেন, তরুণ তর্কীদের নিয়েই আমরা ফাইনালে জয় নিশ্চিত করতে চাই। বর্তমান ২৩ সদস্যের স্কোয়াডের ১৪ জনই প্রথমবারের মতো নেশন্স কাপে খেলছে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাদের সৃষ্টি করা এই অসাধারণ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করতে চাই। এই লড়াইয়ের জন্য অনুপ্রাণিত দলটি দারুণ উজ্জীবিত। সর্বশেষ ২০০২ সালে শিরোপা জয় করা ক্যামেরুন ফাইনালে নামার আগে নিজেদের গুছিয়ে নিতে সময় পেয়েছে ২৪ ঘণ্টারও কম। এরপরও ১৫ বছর পর ট্রফি জিততে মুখিয়ে আছে আফ্রিকান সিংহরা।
×