ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোষণ বঞ্চনা কমবে

কাতারে বিদেশী কর্মীরা স্পন্সর বদলের সুযোগ পাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কাতারে বিদেশী কর্মীরা স্পন্সর বদলের সুযোগ পাচ্ছেন

ফিরোজ মান্না ॥ কাতার কর্তৃপক্ষ বিদেশী কর্মীদের জন্য কফিল বা স্পন্সর পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে। কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তে এখন থেকে কর্মীরা নিয়োগ পাবে চুক্তিভিত্তিক। দেশটির সরকার সম্প্রতি কাফালা পরিবর্তনের জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে। এই সুযোগ দেশটিতে থাকা কর্মীরাও নিতে পারবেন। পুরনো পদ্ধতিতে কর্মীরা কফিল দ্বারা নানাভাবে শোষণের শিকার হতো। নতুন পদ্ধতিতে কর্মীরা ইচ্ছে করলে ভাল বেতন ভাতায় অন্য মালিকের অধীনে কাজ নিতে পারবেন। চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরতে ছিল নিষেধাজ্ঞা। দুই বছরের আগে কেউ চাকরি ছাড়তে পারতেন না। এমন কঠোর আইন থেকে বিদেশী কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, কাতারে বাংলাদেশের এক লাখের বেশি কর্মী কাজ করেন। তারা অনেক কম বেতনে চাকরি করলেও অন্য ভাল কোন চাকরিতে যোগ দিতে পারতেন না। ফলে কঠোর আইনের আওতায় থাকা কর্মীরা শোষণের শিকার হতেন। কফিল নিয়ন্ত্রিত এ পদ্ধতিটি কাতারে ‘কাফালা’ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি দেশ কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাতার কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে সুযোগ চাওয়া হয়। বিভিন্ন দেশের অনুরোধে কাতার কর্তৃপক্ষ ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় কফিল পরিবর্তনের। বাংলাদেশের কর্মীরা এ সুযোগ গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কয়েক হাজার কর্মী কফিল পরিবর্তন করে ভাল চাকরিতে যোগ দিয়েছে। কাফালা ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্মীদের জন্য অধিকতর নমনীয়তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে চুক্তিভিত্তিক নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে। তবে নতুন ব্যবস্থায় কর্মী নিয়োগে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নতুন আইনে স্পন্সরশিপ শব্দটি বাতিল হলেও পুরনো ব্যবস্থা বাতিল হচ্ছে না। নতুন ব্যবস্থার মধ্যেও আধুনিক দাসত্ব চালু হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, কফিলের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে কিংবা এক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ পর একজন কর্মী চাইলে অন্যত্র কাজ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কফিলের অনুমতির প্রয়োজন হবে। নতুন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীকে বর্তমান নিয়োগকারীর অনুমতি ছাড়াই নিয়োগ দিতে পারবেন। কাতারের শ্রম অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে একজন কর্মী কফিল বা স্পন্সর পরিবর্তন করতে পারবেন। কাতার কর্তৃপক্ষ বলেছে, কাফালা ব্যবস্থার জায়গায় নতুন যে পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে তা আধুনিক ও চুক্তিভিত্তিক। আইনটি কাতারে নিয়োজিত বিদেশী কর্মীদের সুরক্ষা দেবে। এদিকে ২০২২ সালে দেশটিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসবে। এজন্য সেখানে নতুন করে কয়েকটি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্টেডিয়াম নির্মাণে বাংলাদেশ কয়েক হাজার কর্মী কাজ করছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল কাতার সফর করেন। সেখানে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলাপ আলোচনা হয়। ওই সময় কাতার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এ জন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের শেষ দিকে দেশটিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে বাজারটি এখনও শুরু হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্ধ থাকা কাতারের শ্রম বাজার কোন সময় খুলে যাবে। কারণ ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে দেশটিতে স্টেডিয়ামসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই নির্মাণযজ্ঞে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের কর্মীরাই কাজ করছেন। তাদের আরও বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে। তখন তারা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল থেকেই কর্মী নেবে। কারণ এসব দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ লাভজনক। অন্য কোন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে গেলে তাদের বেশি মজুরি দিতে হয়। এজন্য তারা অন্য কোন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে না। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছর কাতারে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ হবে।
×