ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সংগঠন ইসলামী সমাজের আঞ্চলিক প্রধানসহ আটক ২৪

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জঙ্গী সংগঠন ইসলামী সমাজের আঞ্চলিক প্রধানসহ আটক ২৪

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকারের কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গী সংগঠন ‘ইসলামী সমাজ’-এর ২৪ নেতাকর্মীকে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে জেহাদী কর্মে উদ্বুদ্ধকরণের বই-পুস্তক ও লিফলেট পাওয়া গেছে। গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে শুক্রবার রাতে গোপন বৈঠক চলাকালে এদের নগরীর পাহাড়তলী মৌসুমী আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জঙ্গী সংগঠনটির আঞ্চলিক প্রধানও রয়েছেন। এদের বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়েছে। আদালত আজ রবিবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানানো হয়েছে, এক সময়ের জামায়াত-শিবিরের কর্মী এসব জঙ্গী দেশজুড়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গড়ে তোলে ইসলামী সমাজ নামের সংগঠনটি। গণতন্ত্র এবং প্রচলিত আইন ও শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় কুমিল্লা জেলার রায়পুর কুশিয়ারা এলাকায়। পাশাপাশি গোপন তৎপরতা রয়েছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সংগঠনটির শীর্ষপদে রয়েছেন সৈয়দ হুমায়ুন কবির। তিনি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে। দেশে বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে এটিও অন্যতম হিসেবে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৯ সালে সরকার সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এরপর থেকে সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গোপন তৎপরতায় লিপ্ত হয়। সিএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংগঠনটির শীর্ষপদের নাম ‘আমির’ এবং আঞ্চলিক প্রধানের পদবি ‘মামুর’। দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের পদের নাম ‘দ্বারা’। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল জব্বার এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বর্তমান আমির হুমায়ুন কবিরও ছিলেন ছাত্রশিবিরের নেতা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৮ সালে জামালপুরে দায়ের হওয়া একটি মামলায় হুমায়ুন কবির আসামি। গোয়েন্দা পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা হলেনÑ মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ ইউছুপ আলী, আমির হোসেন, জামাল উদ্দিন, আবু হানিফ হাজী, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে রুবেল, আলমগীর হোসেন, দিদার হোসেন, মোঃ আনোয়ার, শাহ আলম, রবিউল হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, আবদুল ওহাব, আবদুর রব, মোঃ ছাদেক, আবু বকর কামাল, আব্দুল কাদের, মোঃ আকবর হোসেন, সাইফুল ইসলাম ওরফে ধর্মান্তরিত কৃষ্ণানন্দ দে, মোঃ ইব্রািহম খলিল, মোবারক আলী, আবদুল হাকিম এবং মোঃ রবিউল। এর মধ্যে মোঃ রুহুল আমিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের এবং ইউছুপ আলী টঙ্গী অঞ্চলের প্রধান অর্থাৎ মামুর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিস্তারিত জানতে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিএমপি সূত্রে জানানো হয়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কেশব চক্রবর্তীর নেতৃত্বে শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে অভিযান পরিচালনা করা হয় মৌসুমী আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কের ময়ূর ম্যানশন নামের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। তারা সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানতে পারে পুলিশ। বাড়িটির মালিকের নাম জামাল উদ্দিন। ওই বাসা থেকে আটক করা হয় ইসলামী সমাজ-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান নেতা এবং টঙ্গী অঞ্চলের প্রধান নেতাসহ শীর্ষস্থানীয় ২৪ নেতাকর্মীকে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, সংগঠনটি গণতন্ত্র, দেশের প্রচলিত আইন ও শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার মতবাদে বিশ্বাসী। তাদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয় কিছু বুকলেট ও লিফলেট। এসব বুকলেট ও লিফলেটে রয়েছে গণতন্ত্র, প্রচলিত আইন ও শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মতবাদ, যা লোকজনকে উগ্রবাদী কর্মকা-ে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে সিএমপির গোয়েন্দা শাখা থেকে। বিকেলেই এদের সবাইকে মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়। প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ডের প্রার্থনাও করা হয়েছে। শুনানি শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজ রবিবার রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
×