ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে খেলাঘরের মানববন্ধন

সাম্প্রদায়িক উস্কানি আর ভুলে ভরা পাঠ্যবই দ্রুত প্রত্যাহার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাম্প্রদায়িক উস্কানি আর ভুলে ভরা পাঠ্যবই দ্রুত প্রত্যাহার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে এ দাবি উঠে। এ সময় নেতৃবৃন্দ, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও সাম্প্রদায়িকতাকরণ রোধে সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্ধ করতে হবে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রনেশ দাশগুপ্ত, এম ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদসহ যে লেখকদের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমিক মনন গঠনের পথ রুদ্ধ করার জন্য সেগুলো সংযোজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক এবং বাংলা একাডেমির বানান বিধানের মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তুলছে, ফলে বাংলা বানানের বিষয়ে তারা একটি নৈরাজ্যের মধ্যে অবস্থান করছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্য ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করে একটি স্থিতিশীল বানান কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। দেশের শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সংবিধানে উল্লেখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, গণমুখী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার জন্য উপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক পাঠ্যবই। এজন্য খেলাঘরের সারাদেশে প্রায় ৬৫০ শাখা আসরের অসংখ্য অভিভাবক-অভিভাবিকা, কর্মী, সংগঠক ও শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়া পাঠ্যপুস্তকের ঝকঝকে মলাটের ভেতরে কি বীভৎস মৌলবাদী পরিকল্পনায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সম্প্রদায় ও জাতিগত বৈষম্য ও নারী-পুরুষের বৈষম্য। ‘বই উৎসব’ আর বই উৎসব থাকেনি। তা পরিণত হয়েছে মৌলবাদীদের অট্টহাসিতে। কোমলমতি শিশুদের মনন আর বোধের স্ফুরণ ঘটানোর অন্যতম হাতিয়ার এই পাঠ্যপুস্তকে প্রতিফলিত হচ্ছে পাকিস্তানী দর্শন। এই পাঠ্যপুস্তকে যে সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে জঙ্গীবাদের আরও ভয়াল অন্ধকারে। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, এবারের পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাদ দেয়া হলো। সত্যেন সেন, রনেশ দাশগুপ্তের মানব দর্শনের বোধ থেকে শিশুদের দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হলো। এস ওয়াজেদ আলীর ভ্রমণ কাহিনীকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের মিথ্যা ধুয়া তুলে বাদ দেয়া হলো। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের একটি অনন্য মাধুর্যময় কবিতা তুলে নেয়া হলো। কুসুমকুমারী দাসের কবিতার সম্পাদনায় ছুরি চালানো হলো। যা একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার চেতনা বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব এবং ৭ দফা দাবি পেশ করেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ, সভাপতিম-লীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবু, সম্পাদকম-লীর সদস্য নছরু কামাল খান, হাফিজুর রহমান মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা পারুল বেগম, কোহিনুর বেগম শিল্পী, ফখরুল ইসলাম, আনিসুল ইসলাম অপু এবং সীমা রানী ঘোষ। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।
×