ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজাদপুরে নিহত শিমুলের দাফন সম্পন্ন ॥ মেয়রকে গ্রেফতারে আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শাহজাদপুরে নিহত শিমুলের দাফন সম্পন্ন ॥ মেয়রকে গ্রেফতারে আল্টিমেটাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, ৪ ফেব্রুয়ারি ॥ শাহজাদপুরে পৌর মেয়রের গুলিতে নিহত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল ও তার মৃত্যুর খবর শুনে শোকাহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী নানি রোকেয়া বেগমের (৯০) জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা এবং পরে নিজ গ্রাম মাদলায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মাদলা-কাকিলামারি কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। জানাজায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন, সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলিমুন রাজিব, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুণ-অর রশিদ খান হাসান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজলে খোদা লিটন, শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কু-ু, সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি, দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা সৈয়দ হুমায়ুন পারভেজ শাব্বির, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান তুহিন, সাংবাদিক আবুল কাশেম, সাংবাদিক ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি আল-আমিন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক মামুন রানা, শামছুর রহমান শিশিরসহ কয়েক হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। এদিকে মেয়রকে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ ছাত্রলীগের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল স্বতস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। প্রথম জানাজা শেষে শাহজাদপুর সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ মেয়রের গ্রেফতার দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে খুনী মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতারা। বিক্ষোভ ও সমাবেশে সিরাজগঞ্জ জেলার সংবাদকর্মীরা অংশ নেন। জানাজাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন বলেন, একজন নির্ভীক সংবাদকর্মীকে খুন করা হয়েছে। তিনি নিহতের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, খুনী যেই হোক না কেন, তাকে দ্রুতবিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু মেয়র হালিমুল হক মিরু নিজেই বলেছেন, আমি আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছি, সেহেতু তার কথাতেই হত্যার প্রমাণ মেলে। তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই খুনী মেয়রকে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত তার কাছে বলেছেন, ঘটনার সময় এএসপি সার্কেল মেয়রকে গুলি করতে নিষেধ করলেও তা অগ্রাহ্য করে গুলি ছুড়েছেন তিনি। এতে প্রমাণিত হয়, মেয়র হালিমুল হক মিরু হত্যার উদ্দেশ্যেই সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, খুনী মেয়র পুলিশ পাহারায় থাকা সত্ত্বেও বাড়ি থকে পালাল কিভাবে? প্রশাসনের কাছে এর জবাব চান তারা। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা খুনী মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেন নেতারা। নির্ভীক সাংবাদিক শিমুলকে এই ন্যক্কারজনক হত্যার ঘটনায় শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হিরু ও যুগ্ম সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এছাড়াও শাহজাদপুর বণিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন এই হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হরতালে সমর্থন দেয়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার পেশাগত দায়িত্ব পাালনকালে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়লে সাংবাদিক আঃ হাকিম শিমুল গুরুতর আহত হন। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয় হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান সাংবাদিক শিমুল। এ ঘটনা কেন্দ্র করে শাহজাদপুরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শাহজাদপুরের গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শনিবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নিহত সাংবাদিক শিমুলের পরিবারের লোকের সঙ্গে সাক্ষাত করে সমবেদনা জ্ঞাপন করার কথা রয়েছে।
×