ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রফতানি অর্ডার পাওয়া গেছে ২৪৩ কোটির

এবারের মেলায় ১১৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এবারের মেলায় ১১৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পর্দা নামল ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। বিদেশী ক্রেতাদের পণ্য কেনার গড় অর্ডার ছিল প্রতিদিন প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। অর্থাৎ দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিলে এবারের মেলায় প্রতিদিন ১১ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। পণ্য বিক্রির এই হার প্রতিবছর বাড়ছে। দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের দাবির মুখে চারদিন মেলার সময় বাড়ানো হয়। বাণিজ্যমেলায় অর্থনৈতিক কর্মকা- বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে এই মেলা আরও পরিসরে করার ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। শনিবার বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে সারা মাসের পণ্য বিক্রি বিদেশী অর্ডারের একটি হিসাব দেয়া হয়। ইপিবি জানায়, ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা থেকে ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার পণ্যের রফতানি আদেশ পাওয়া গেছে। এছাড়া এবারের মেলায় ১১৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। গত ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় ২৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার রফতানির আদেশ হয়েছিল। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া বাণিজ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরুহা সুলতানা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বরাবরের মতো এবারও ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতা এবং প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার দেয়া হয়। দুটি ক্যাটাগরিতেই ওয়ালটন প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৩৬ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা ভ্যাট প্রদান করে। একই ক্যাটাগরীতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে যথাক্রমে র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স ও হাতিল ফার্নিচার। গতবারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ভ্যাট প্রদান করে ওয়ালটন। সেরা প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতেও প্রথম পুরস্কার লাভ করে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান, এগুলো হচ্ছে আকতার ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচার ও আকিজ ফুড এ্যান্ড বেভারেজ। একই ক্যাটাগরিতে নাদিয়া ফার্নিচার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কোকোলা ফুড প্রডাক্টস পায় তৃতীয় পুরস্কার। জনপ্রশাসনমন্ত্রী বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ওয়ালটনের পক্ষে পুরস্কার দুটি গ্রহণ করেন কোম্পানিটির নির্বাহী পরিচালক ও বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রেজওয়ানা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তার সঙ্গে কৃষকরাও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। বাণিজ্যমেলা সেই উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহ জোগাবে। ভবিষ্যতে এই মেলা আরও বড় পরিসরে করার উদ্যোগ নেবে সরকার। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হচ্ছে। রফতানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে পণ্য উৎপাদনে আরও নৈপুণ্য ও আধুনিক ডিজাইন আনতে হবে। পণ্যের মান বাড়লে দেশী-বিদেশী ক্রেতা সৃষ্টি হবে। তাই যারা পণ্য উৎপাদন করছেন তাদের এই দিকটায় নজর দেয়া প্রয়োজন। বাণিজ্য সচিব বলেন, মাসব্যাপী মেলা সফল করার জন্য্য ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। এক্ষেত্রে ইপিবি প্রতিবছর বেশ পরিশ্রম করে। মেলা আয়োজনে আমরা সফল বলেই মানুষ যানজট উপেক্ষা করে মেলায় আসে। তাই মেলাও প্রাণবন্ত হয়েছে। মাতলুব আহমাদ বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবার সহযোগিতায় শেষ হলো মেলা। এক সময় বাণিজ্য মেলায় আমি বাঁশ দিয়ে স্টল বানিয়েছিলাম। সেই গ-ি ছাড়িয়ে এখন বিশাল বিশাল প্যাভিলিয়ন ও স্টল হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেশি আয় হলে ভ্যাটও বেশি দেবে। ব্যবসায়ীরা বিশ্বে অনেক সুযোগ করে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কল্যাণেই এখন মালয়েশিয়ায় ভিসা ফ্রি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরুহা সুলতানা বলেন, এবার রফতানি অর্ডার পাওয়া গেছে ২৪৩ দশমিক ৪৪ কোটি টাকার। পণ্য বিক্রি হয়েছে ১১৩ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার। গতবারের চেয়ে এবার মেলায় ভাল বিক্রি হয়েছে। মেলায় কোনরকম ঝামেলা হয়নি। সুষ্ঠুভাবে মেলা শেষ হয়েছে।
×