ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনওর কর্মকাণ্ডে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ইউএনওর কর্মকাণ্ডে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ৪ ফেব্রুয়ারি ॥ ছাগলনাইয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণ আর একগুঁয়েমি কর্মকা-ে উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউএনও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ডিজিটাল মেলায় পৌরসভার স্টল বন্ধ করে দেয়ায় মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে বদলি হলেও গত দেড় মাসেও ছাগলনাইয়া ছাড়েননি ইউএনও জেসমিন আক্তার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার যোগদানের পর থেকে তার অসৌজন্যমূলক আচরণ ও দুর্ব্যবহারের কারণে জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ অতিণ্ঠ। তার অসৌজন্যমূলক আচরণ থেকে রক্ষা পাননি এলাকার বয়োবৃদ্ধরাও। এমনকি প্রশাসনবহির্ভূত উপজেলার উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা তার হাতে প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছেন। ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ মোস্তফা জানান, গত ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ডিজিটাল মেলায় ছাগলনাইয়া পৌরসভার স্টল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিষয়টি মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ইউএনও বিজয় দিবস পালনের জন্য ছাগলনাইয়া বাজারে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন, যার সিংহভাগ নিজেই আত্মসাত করেছেন। ছাগলনাইয়া উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার হাট নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন ইউএন জেসমিন আক্তার। এক বছর পার হয়ে গেলেও ক্রেতাদের মেয়াদোত্তীর্ণ পরিচয়পত্র নবায়ন করছেন না। অবৈধভাবে ২০ টাকা করে টিকেট বিক্রির মাধ্যমে ক্রেতাদের হাটে যেতে হচ্ছে। এ টাকা কোথায় জমা হয় তার কোন হদিস নেই। ২০ টাকার টিকেটের সুবাদে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনীর কালোবাজারিরার প্রতি মঙ্গলবার প্রতিজনে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার ভারতীয় ব্র্যান্ড আইটেম মালামাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশী টাকা পাচারসহ চোরাচালানিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ফেনীর ছাগলনাইয়ার বার্ডার হাট। গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ ফাউন্ডেশনের ছাগলনাইয়ার সমাবেশ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন ইউএনও। অনুষ্ঠানে অর্থ সচিবসহ পাঁচজন সচিব উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অতিথিদের ডাকবাংলোতে ঢুকতে অনুমতি দেননি ইউএনও জেসমিন আক্তার। পরে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডাকবাংলো খোলার অনুমতি নিয়ে অতিথিদের ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করেন বলে জানান পৌর মেয়র ও অনুষ্ঠানের আয়োজক মোঃ মোস্তফা। রাত পর্যন্ত অফিসে সময় কাটালেও তার টেবিল থেকে নথি ছাড় পাচ্ছে না মাসের পর মাস। বিশেষ করে রাজস্ব, ইজারা, বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নথি হলে তা সহজে আলোর মুখ দেখে না। গত ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর কুমার সাহার স্বাক্ষরিত এক আদেশে ছাগলনাইয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তারকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু গত দেড় মাসেও তিনি ছাগলনাইয়া ছেড়ে তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। বিভিন্ন দেনদরবার ও তদবিরের কারণে বদলির আদেশ বহাল থাকার পর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি জেসমিন আক্তার। ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র মোস্তফা জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে বাজার থেকে ৬০-৭০ লাখ টাকা ইউএনও চাঁদা তুলেছেন বলে বাজারের ব্যবসায়ীরা তার কাছে জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে ইউএনও জেসমিন আক্তার জানান, ডিজিটাল মেলায় পৌরসভা কোন স্টল নেয়ার জন্য আবেদন বা মুখেও বলেনি। মেলা চলাকালে অন্য প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া স্টল পৌরসভার পক্ষ থেকে দখল করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বর্ডার হাটের পরিচয়পত্র ও ২০ টাকা করে টিকেট তার যোগদানের আগে থেকেই চলে আসছে। তিনি শুধু আগের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন। বর্ডার হাটের সকল বিষয় জেলা প্রশাসক দেখে থাকেন। তিনি শুধু জেলা প্রশাসকের আদেশ পালন করে আসছেন। বদলির আদেশের বিষয়ে জেসমিন আক্তার জানান, বদলির বিষয়টি রুটিনওয়ার্ক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে তিনি ছাগলনাইয়াতে অবস্থান করছেন। ছাগলনাইয়াতে তদবির করে তিনি থাকছেন না। যখন আদেশ দেবে চলে যাবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, ইউএনও জেসমিন আক্তার সৎ কর্মঠ কিন্তু গরম মেজাজের মহিলা। এলাকার কাজের স্বার্থে বদলির আদেশ থাকা সত্ত্বেও তদবির করে রেখে দিয়েছি। তবে এখনও তার বদলির আদেশ বাতিল হয়নি।
×