ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পরিবহন তল্লাশির নামে চলছে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চট্টগ্রামে পরিবহন তল্লাশির নামে চলছে বাণিজ্য

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ও অহেতুক পরিবহন তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে যাত্রী ও পরিবহনের চালকরা। সকাল-সন্ধ্যার বালাই নেই, আকস্মিক কোন অভিযানও নয়। সিডিউলের মধ্যেই চলছে তল্লাশি। তবে এ তল্লাশি শুধুমাত্র সিএনজি ট্যাক্সি, পিকআপ ও ভ্যানগাড়িকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও কাগজপত্র দেখার নামে চাঁদাবাজি চলছে যত্রতত্র। নগরীর শতাধিক স্পটে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পরিবহন চালকরাও ব্যস্ততম সড়ক বাদ দিয়ে আবাসিক এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। অপরদিকে, পাহাড়িকা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে প্রতিদিন দফায় দফায় আকবর শাহ থানা পুলিশ ছোট গাড়ি বিশেষ করে রিক্সা, টেম্পো, ট্যাক্সি ও ভ্যানগাড়ির ওপর অভিযান চালায়। এ অভিযানে দেহ তল্লাশিসহ গাড়ি তল্লাশিও চলে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এ ধরনের অভিযান থেকে গত তিন মাসেও কোন ধরনের মাদক উদ্ধার কিংবা অবৈধ পণ্য পরিবহনের তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। কোন ধরনের গ্রেফতারও হয়নি এ স্পট থেকে। তবে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায়ই প্রধান টার্গেট থাকে পুলিশের। এ স্পটে কোন নারী-পুরুষ একসঙ্গে যদি পরিবহনে চলাচল করে তাদেরও নানা জেরার মুখে পড়তে হয়। পরিবারের আপনজন নিয়েও চলাচল অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়েছে এ এলাকায়। শুক্রবার সকালে নগরীর জাকির হোসেন রোডে মাত্র ২শ’ ফুটের ব্যবধানে ট্রাফিক পুলিশ ও আকবর শাহ থানা পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিদিনই পাহাড়তলী রেলওয়ে কবরস্থানের মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ ও একই সড়কের মাত্র ২শ’ ফুট দূরে পাহাড়িকা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে আকবর শাহ থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। কবরস্থানের মোড়ে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এ ক্যামেরার ভিডিও এ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে বাকি অংশটুকুতে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। এ স্পটে ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিয়ত সিএনজি ট্যাক্সি, টেম্পো, পিকআপ ও ভ্যানগাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। শুরুতেই চালকের কাছে গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে প্রথম দফায় চলে হয়রানি। কাগজপত্র ঠিক থাক বা না থাক, দরকষাকষি শুরু হয়ে যায়। এতে কোন ধরনের গড়িমসি করলেই সার্জেন্ট মামলার হয়রানি প্রসঙ্গ তুলে আনে। এতে ত্রুটিযুক্ত কাগজপত্রের সুযোগ নিয়ে চলে চালকের সঙ্গে অর্থ লেনদেন। শুক্রবার সকালে আরও দেখা গেছে, ট্রাফিক কনস্টেবল রুহুল আমিন সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একের পর এক গাড়ি থামাচ্ছে। একপর্যায়ে পেছন থেকে এক মোটর সাইকেল আরোহী ট্রাফিক পুলিশের অনিয়মতান্ত্রিক গাড়ি থামানোর পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করলে যাচ্ছেতাই বলা শুরু করে রুহুল আমিন। বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে কনস্টেবল খোরশেদ এগিয়ে এসে রুহুল আমিনের পক্ষ নিয়ে নানা কটু কথা বলতে থাকে। একপর্যায়ে কনস্টেবল খোরশেদ জানায়, এটাই ট্রাফিকের নিয়ম। পেছনে কী ঘটল তা দেখার বিষয় নয়। দীর্ঘ প্রায় পনেরো মিনিটের পর্যবেক্ষণের পর মোটরসাইকেল আরোহী পুনরায় ঘুরে এসে দেখলেন একই স্পটে দেদার গাড়ির ডকুমেন্ট দেখার নামে অর্থ আদায় চলছে। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা সার্জেন্ট আনোয়ার জনকণ্ঠকে জানান, কনস্টেবল রুহুল আমিন ও খোরশেদ আইন ভঙ্গ করে রাস্তায় গাড়ি থামাচ্ছিল। কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ দুই কনস্টেবল। কোন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ স্পটে ট্রাফিক পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়।
×