ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ দিনে অল্পমূল্যে পণ্য কিনেছে ক্রেতারা

পর্দা নামল বাণিজ্যমেলার

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পর্দা নামল বাণিজ্যমেলার

ওয়াজেদ হীরা ॥ অবশেষে এক মাসেরও বেশি সময় চলা বাণিজ্যমেলা শেষ। আর একই সঙ্গে ভেঙ্গেছে মানুষের মিলনমেলাও। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখ পর্যন্ত বাণিজ্য আর মানুষের মেলবন্ধন বসেছিল আগারগাঁওয়ে, যা শনিবার আনুষ্ঠানিক সমাপনীর মাধ্যমে ইতি ঘটল। বর্ধিত মেলার শেষ দিনেও মানুষ ছুটেছেন মেলামুখী। পছন্দের নানা পণ্য কিনে নিয়েছেন শেষ দিনেও। এদিকে বাণিজ্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় (ডিআইটিএফ) মোট রফতানি আদেশ পাওয়া গেছে ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। একই সঙ্গে মেলায় বিক্রি হয়েছে ১১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পণ্য। মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় ছিল অবিশ্বাস্য। আর ক্রেতারাও নানা ছাড়ে পণ্য লুফে নিয়েছেন। মেলা শেষ তাই বিক্রেতারাও তাদের পণ্য নিয়ে দরকষাকষি করেননি। কোন পণ্যে লোকসান হলেও বিক্রেতা তার আটকে রাখেননি। সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন পণ্য বিক্রির জন্য। একাধিক বিক্রেতা জানান, মেলার শেষ দিন হওয়ার কারণে পণ্য ধরে রাখলে আরও বেশি লোকসান। তাই যে ক্রেতার নিকট যেমন দামে বিক্রি করা যায়। মেলার শেষ দিনেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই স্টলগুলোতে। ত্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। শনিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্যমেলার শেষ দিন বেশি আগ্রহ ছিল গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্যের প্রতি। কেউ কেউ কিনে নিচ্ছেন সংসারের প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক পণ্যও। জুয়েলারি স্টলগুলোতে ভিড় যেন একটু বেশিই। তিন শ’ টাকার কানের দুল এক শ’ টাকায় নেমে এসেছে। কেউ আবার আরও কমেও কিনেছেন। ভিড় তো হবেই। ক্রেতা ইসমত আরা জানান, তিনি মেলার শুরুতে এসে যে কানের দুল কিনেছেন তিন শ’ টাকায়, আজ তিন জোড়া কিনলেন সেই দামে। খুশি যেন ধরে না তার। ব্লেজার ও নানা ধরনের কটিতে দিচ্ছে নানা ছাড়। ৭০০-১২০০ টাকায় মিলেছে ব্লেজারও। তরুণরা কেউ কেউ কিনে নিলেন। যদিও শীত নেই তবুও সস্তা পেয়ে যেন না কিনে উপায় নেই। মেলায় আসা নাইমুল আলম জানালেন, তার স্ত্রী পছন্দ করে ব্লেজার কিনে দিয়েছেন। দাম নিয়েও তাদের সন্তুষ্টির হাসি। এদিন নাবিস্কু, রোমানিয়াসহ বিভিন্ন স্টলে দেখা যায় তাদের বান্ডেল অফার পেতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এদিন শিশুপার্কে বা খাবারের স্টলগুলোতে খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। যারাই এসেছেন সবাই নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দ্রুতই ভিড় এড়িয়ে মেলা ছেড়েছেন। এদিকে, মেলায় বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরাও এদিন বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। ‘পার্ট টাইম’ কাজ করতে অনেক বিক্রয়কর্মী এক মাসের চুক্তিতে কাজ করেছেন বিভিন্ন স্টল বা প্যাভিলিয়নে, যাদের অনেকেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কাজ এবং আনন্দ দুই উপভোগ করেছেন তারা। আর এক মাসে অর্জন করেছেন অভিজ্ঞতাও। এই কয়েকদিনে অনেক অচেনা মানুষও কাজের সুবাদে হয়ে গেছে কাছের বন্ধু। অথচ কাজ শেষ হওয়ার কারণে সবাই সবার গন্তব্যে ছুটবে। তবে সম্পর্কটা যেন অটুট থাকে সে চেষ্টাও ছিল বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে। লাভেলা আইসক্রিমের এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, মেলায় সবাই একত্রে কাজ করলাম। এখন আর নিয়মিত দেখা হবে না। তবে সবার সঙ্গে যেন যোগাযোগটা থাকে সে চেষ্টাই করব। এস মাসের মেলা আমাদের সবাইকে বন্ধুত্বের বন্ধনে বেঁধে দিয়ে গেল। অথচ যাদের এক মাস আগেও চিনতাম না। এদিকে, মেলায় বিভিন্ন প্যাভিলিয়নেও দিয়েছে মেগা অফার। সে অফার কোন কোন প্যাভিলিয়নে ১০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। মেলার শেষ দিনেও মুঠোফোন কিনতে ভিড় দেখা গেছে। কেনার চেয়ে দেখার জন্যই যত ভিড়। ওয়ালটন, স্যামস্যাং কোম্পানির পণ্য দেখতে ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। মেলায় ভ্রাম্যমাণ হকাররা দর্শনার্থীদের বেশ বিরক্ত করলেও হকারদের কাছ থেকেও পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সেলফি স্টিক বিক্রি করেছে ১০০-১৫০ টাকায়। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনা তো আছেই। বিভিন্ন ধরনের জামা হকাররা হাঁকডাক করে বিক্রি করেছেন ২০০-৩০০ টাকায়। শাল বিক্রি করেছেন ১৫০ টাকায়। এছাড়াও নানা রকম খাবার বিক্রি করতে দেখা গেছে হকারদের। মেলায় হকার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শেষ সময়ে সেটা দেখা যায়নি। শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠান থাকার কারণে ভিআইপিদের যাতায়াত বেড়েছিল। ফলে ভিআইপি গেটসহ রাস্তায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যারা মেলা থেকে বের হয়েছেন তাদের কাউকে খালি হাতে দেখা যায়নি। কোন না কোন পণ্য কিনেছেন মেলা থেকে। কেউ আবার একাধিক পণ্য কিনেছেন, ফলে ব্যাগের ঝুলি নিয়ে হাঁটতে গিয়ে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনার মধ্যে। সবার এমন কেনাকাটার আগ্রহের বিষয়ে জানা গেল, অল্প মূল্য পেয়ে কেউ ছাড়তে নারাজ। সস্তায় বস্তা ভরার মতো অবস্থা! আগামী এক বছরের জন্য এ মেলার ইতি টানলেও মেলার স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে অনেকদিন। আবার নতুন বছরে নতুন কিছু নিয়ে আসবে বাণিজ্যমেলাÑ সে অপেক্ষায় থাকলেন ক্রেতা-বিক্রেতারাও। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ২১টি দেশ অংশ নেয়। মেলায় এবার ১৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৮০টি প্যাভিলিয়ন ছিল, যার মধ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল ৪৮টি।
×