ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌতুকের বলি

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যৌতুকের বলি

এ যুগে বাস্তব কোন দৃষ্টান্তে নয়, ‘যৌতুক’ শব্দটি শুধু অভিধানেই পাওয়ার কথা ছিল। চরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে আজও দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের বলি হচ্ছেন নারীরা। শুক্রবার জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ পড়ে শিউরে উঠতে হয়। কুষ্টিয়ায় যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়িতে লাইলি খাতুন নামের এক গৃহবধূর শরীর আগুনে ঝলসে দেয়া হয়েছে। বিয়ের সময় একটি গহনা (দুল) আর কিছু নগদ টাকা দেয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন চালিয়ে শেষ পর্যন্ত গায়ে পেট্রোল ঢেলে ঝলসে দেয়া হয়েছে। কিছুকাল আগে নারায়ণগঞ্জের ছোট বিনাইরচর এলাকায় মাত্র ২০ হাজার টাকা যৌতুক না দেয়ার কারণে সুমা নামে আরেক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা করে তার স্বামী ও শাশুড়ি। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজকে বাঁচাতে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে কম উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যৌতুকের বিরুদ্ধে আছে শক্ত আইন, যৌতুকের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও নেয়া হয়েছে নানামুখী কর্মসূচী। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামের অনুসারী। ইসলাম ধর্মে যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ। যৌতুক দেয়া-নেয়াকে ইসলাম ধর্মে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু যৌতক প্রথা দূরীকরণে এখনও কাক্সিক্ষত ফল লাভ সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই যৌতুকের বলি হচ্ছে নারীরা। যৌতুক দিতে না পারার কারণে গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না সময় মতো। হলেও পাচ্ছে না যোগ্য পাত্র। আবার বিয়ের পর যৌতুকের জন্য চলছে অমানুষিক নির্যাতন-নিপীড়ন। অনেকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশ ও জাতির জন্যে কিছুতেই মঙ্গলকর না হলেও তা থামানো যাচ্ছে না। যৌতুকের দাবিতে ফেরদৌসী বেগম শিল্পী নামে এক গৃহবধূকে তার স্বামী মাসুদ পিটিয়ে হত্যা করার খবর এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার গোবীনপুর গ্রামে যৌতুক না পেয়ে গভীর রাতে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে ববিতা খাতুন নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করে। চুয়াডাঙ্গায় নাজমা খাতুন নামে অপর গৃহবধূকে স্বামী যৌতুকের কারণে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একইভাবে নীলফামারীর ডিমলায় গৃহবধূ আনোয়ারা বেগমকে ৭০ হাজার টাকার জন্য হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কত উদাহরণ দেয়া যায়! প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে যৌতুকের কারণে নারীনির্যাতন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। প্রতিবছরই যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। যার সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। যৌতুক কেবল গরিবের ঘরে নয় মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, ধনী সব ধরনের পরিবারেই ছড়িয়ে আছে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মনে করে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতা অনেক উচ্চশিক্ষিত পুরুষের মাঝেও আছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলেই সমাজের বহু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে সমাজের এই অন্যায় অনাচার দূর করা সম্ভব নয়। যৌতুকবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে যৌতুকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন।
×