ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

নিজ দেশে শুধু পরবাসী নয়, অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘকাল ফিলিস্তিনীরা যেমন দুঃসহ জীবনযাপন করছে, পৃথিবীর আর কোন জাতির ইতিহাসে তার নজির নেই। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের একাংশে ইহুদীদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পাশ্চাত্যের প্রধান দেশগুলোর সমর্থন ও স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে যেসব ইহুদী সেখানে বাস করছিল, তারা ছাড়াও নতুন এই রাষ্ট্রের নাগরিক হবার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীরা দলে দলে আসতে থাকে। ইসরাইলে যেসব মুসলিম ফিলিস্তিনী যুগ যুগ ধরে বাস করছিল, তাদের নৃশংসভাবে উৎখাত করে ইহুদীরা নিজেদের আবাস গড়ে তুলেছিল। এর ফলে ৫০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনী বাস্তুহারা হয়ে বিভিন্ন আরব দেশে শারণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। অর্ধ শতাব্দীর অধিককাল অতিক্রম করে গেলেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। শরণার্থী ফিলিস্তিনীদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করেই ইসরাইলের আগ্রাসী নেতারাও যুদ্ধংদেহী সামরিক বাহিনী ক্ষান্ত হননি, তারা ১৯৬৭ সালে যুদ্ধ করে ফিলিস্তিন ভূখ-ের যেখানে ফিলিস্তিনীরা বাস করছিল; যেমন গাজা, গোলান মালভূমি, সিনাই পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ সবটাই দখল করে নেয়। এর ফলে যা হতে পারত ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র, তা রাতারাতি হয়ে গেল ইসরাইলের অধিকৃত ভূমি। এরপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এসব ভূখ- ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব পাস করে। গাজা ও সিনাইয়ের দখল ছেড়ে দিলেও অন্যগুলো আজও নিজেদের দখলে রেখেছে। জাতিসংঘ থেকে একাধিক সিদ্ধান্তে ইসরাইলকে যুদ্ধ-পূর্ববতী সীমান্ত রক্ষার উদ্দেশ্যে অধিকৃত এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হলেও ইসরাইল তা কর্ণপাত করেনি। যেমন করেনি গত ২৩ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে অধিকৃত ফিলিস্তিনে নিজেদের বসতি স্থাপন অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিতে গৃহীত প্রস্তাবটি সাধারণভাবে গৃহীত হলেও ইসরাইল উল্টা জাতিসংঘে চাঁদা প্রদান হ্রাস করে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখ-ে ইসরাইলের বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা। ইসরাইলের বর্তমান নীতি পুরোপুরি শান্তির বিপরীতে যুদ্ধংদেহীভাব। যা এই দুই দেশ কিংবা ইসরাইল সমর্থক ট্রাম্প সরকারের কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। দুটি দেশের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একমাত্র পন্থা হচ্ছে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধান। জাতিসংঘও মনে করে, দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিশ্বাস নেই। দুই জাতির জন্য দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তরিক আলোচনায় ইসরাইল আগ্রহী নয় অথচ ফিলিস্তিন ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইলকে পারস্পরিক স্বীকৃতির অংশ হিসেবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ইসরাইল অদ্যাবধি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না। বরং তাদের ভূখ- অসততার মুখে জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ইহুদী বসতি স্থাপন করছে। বাংলাদেশ ইসরাইলকে এখনও স্বীকার করে না। বরং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি শুধু নয়, তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে সর্বাত্মক সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে আসছে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনী মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানান। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারও ফিলিস্তিনের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে আবারও। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের তিন দিনের ঢাকা সফরকালে উভয় দেশ যৌথ কমিশন গঠনে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কূটনীতিক রাজনৈতিক সম্পর্ক না থাকার কারণ, এই দেশটিকে রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন না করায়। বাংলাদেশও মনে করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধানে দুই জাতি, দুই রাষ্ট্র, নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইসরাইল প্রীতি এই অঞ্চলের শান্তি বিঘœ শুরু নয়, ফিলিস্তিন নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্বই উপড়ে ফেলার শামিল। ফলে দেশটি এখন একটি সঙ্কটময় অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে ইসরাইলের আগ্রাসনবাদী পদক্ষেপের ফলে দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে মাহমুদ আব্বাসকে ফিলিস্তিন শান্তি, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও যুদ্ধের অবসানে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘকাল ধরেই ফিলিস্তিনীদের মুক্তিসংগ্রামের পাশে ছিল, আছে, থাকবে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দ্রুত বিকশিত হোক- এই প্রত্যাশা আমাদেরও।
×