ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেসিকে নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন আর্জেন্টিনার

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মেসিকে নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন আর্জেন্টিনার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ ফুটবলের রঙ্গমঞ্চে রঙিন অভিষেক হয়েছিল লিওনেল মেসির। সেটা ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপের কথা। বিশ্বকাপ অভিষেকে মাঠে নেমেই নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন সে সময়ের ১৮ বছর বয়সী তরুণ। গ্রুপ পর্বে সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রোর বিরুদ্ধে ৭৪ মিনিটে মেক্সি রড্রিগুয়েজের বদলি হিসেবে নেমে ১৪ মিনিট পরই প্রথম গোল পেয়েছিলেন মেসি। ৮৮ মিনিটে করা সেই গোলটির মধ্য দিয়েই ফুটবলবিশ্বে নিজের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন এ যুগের বিস্ময় বালক। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে মেসির পরের অধ্যায়ে যোগ হয় শুধুই হতাশা, ব্যর্থতা, আপসোস আর হাহাকার। অভিষেকে আলো ছড়ানোর পর আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ব্যর্থ হন। তবে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় মেসির। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ টানা দুই বছর দু’টি কোপা আসরের ফাইনালেও পরাজিত দলের সদস্য হন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। এরপর রাগে-ক্ষোভে অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন ক্ষুদে এই জাদুকর। তবে দেশের টানে আবারও ফিরেছেন। চারবার দেশের জার্সিতে ফাইনালে হারলেও অনেকে মনে করেন, এখনও মেসির সুযোগ আছে বিশ্বকাপ জিতে অবসর নেয়ার। এক সাক্ষাতকারে এমন জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ এডগার্ডো বাউজা। আগেও বেশ কয়েকবার একথা বলেছেন তিনি। সম্প্রতি আরেকবার বাউজা বলেছেন, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে তাদের। মেসি নামের অপ্রতিরোধ্য ফুটবলারের কারণেই এখনও স্বপ্ন বুনছেন আর্জেন্টাইন কোচ। পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার মেসিকে নিয়ে আগামী বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আর্জেন্টিনা কোচ। আগামী মাসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিলির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। ২৩ মার্চ হতে যাওয়া ম্যাচটি জিতলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চারে উঠবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বাউজা বলেন, মেসিকে নিয়ে আমি শুধু আর্জেন্টিনার ২০১৮ বিশ্বকাপ জেতার কথাই ভাবতে পারি। আমাদের সে সম্ভাবনা ও যোগ্যতা আছে। চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচটি নিয়ে এখন থেকেই প্রথম একাদশ সাজানো নিয়ে ভাবছেন তিনি। বলেন, লুকাস বিগলিয়া ও জ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো মাঝমাঠে খেলবে। ডি মারিয়া, হিগুয়াইন ও মেসি থাকবে সামনে। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার অঞ্চলের বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলে এখন পর্যন্ত ১২টি করে ম্যাচ খেলে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে ব্রাজিল। ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উরুগুয়ে। তৃতীয় স্থানে থাকা ইকুয়েডরের পয়েন্ট ২০। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে চিলি। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম আর্জেন্টিনা। এদিকে লিওনেল মেসি ও দিয়াগো ম্যারাডোনার মধ্যে অবিরত তুলনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী মারিও কেম্পেস। সারাবিশ্বে প্রায় সবসময় তর্ক চলে ম্যারাডোনা ও মেসির মধ্যে কে সেরা। এমন তুলনায় ক্ষুব্ধ গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট জয়ের পাশাপাশি ১৯৭৮ সালে ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়া কেম্পেস। তিনি বলেন, ম্যারাডোনা হলো ম্যারাডোনা, এটা নিয়ে তর্ক চলে না। এছাড়া সে তো আর খেলে না। অনেক আগেই খেলা বন্ধ করেছে সে। আর মেসি (এখনও) খেলে এবং আমাদের আনন্দ দেয়। কেম্পেস বলেন, তাদের দুইজনকে তুলনা করতে পারেন না আপনারা। কারণ তারা দুটি ভিন্ন যুগে খেলেছে, ভিন্ন দল ও ভিন্ন সতীর্থদের সঙ্গে। এটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। তারা বলে ম্যারাডোনা ঈশ্বর, কিন্তু সেখানে ঈশ্বর একজনই (আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে)। মেসিকে নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার মধ্যে প্রধানতম হলোÑ দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। অন্যদিকে ম্যারাডোনা ১৯৮৬ সালে দেশকে এনে দেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। কিন্তু শুধু শিরোপা না জেতায় মেসিকে নিয়ে সমালোচনায় আপত্তি ৬২ বছর বয়সী কেম্পেসের। তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে যখন ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতল তখন সম্ভবত তার যে সৌভাগ্য ছিল সেটা মেসির ছিল না। ম্যারাডোনার খুব ভাল সতীর্থ ছিল এবং সময়টা তার অনুকূলে ছিল। মেসিরও ভাল সতীর্থ আছে। কিন্তু ম্যারাডোনার যেটা হলোÑ ঈশ্বরের হাত দিয়ে ফাইনালে যাওয়ার পথ করল এবং ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে কয়েকজনকে টপকে গোল করল। তার দলে ভাগ্য অনেক সহায় ছিল। কেম্পেস বলেন, অনেক কিংবদন্তিই তো বিশ্বকাপ জেতেনি। কিন্তু তাতে কি হয়েছে।
×