স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা, বাঙালির মাতৃভাষা। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভাষার মর্যাদা অর্জিত হলেও খোদ রাজধানীতেই চলছে বাংলা ভুল বানানের ছড়াছড়ি। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট সব জায়গাই চলছে ভুলের ছড়াছড়ি। এতদিনে এসেও বাংলার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভাষা সৈনিকরা।
সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নামফলক, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে রাস্তার নামফলক পর্যন্ত সব লেখাতেই ভুল বানানের ছড়াছড়ি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দেখা গেল ‘ভুল’ শব্দটি লিখতেও ভুল করেছে দেশের প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে আকর্ষণ দর্শনার্থীগণ, জনগণ বানানে ভুল। ইংরেজী বানান লেখার ব্যাকরণ না মানার প্রবণতা দেখা গেল এখানে। সরণি বানানের ভুল দেখা যায় প্রায় প্রত্যেক সড়কের নাম ফলকে। আর একাডেমি বানানে যেন পারদর্শী নয় সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভুল বানানের মহড়ায় শামিল সর্বোচ্চ আদালতের নামফলকও। এখানেও মানা হয়নি বাংলায় বিদেশী শব্দ লেখার নিয়ম। ভুলের মিছিলে নাম লিখিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। ইনস্টিটিউট বানানের অজ্ঞতায় যথারীতি প্রশ্ন ওঠে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়ে। আর শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেশি শব্দের পাশাপাশি বিদেশী শব্দ বানানের ভুলের আধিক্যে সঠিকটা নিয়েই বিব্রত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাষার শুদ্ধতার বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার ফলেই এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। ভুল ব্যবহার রোধে সচেতন হওয়ার তাগিদ তাদের।
ঢাবির ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ আনসারী বলেন, ‘যারা বাংলা ভাষাকে খুব ভাবে ব্যবহার করতে পারছে না বা করছে না তাদের মনের মধ্যে ইংরেজী ভাষাটা ধারণ করে যাচ্ছে। কারণ বাংলা ভাষা মাতৃভাষা বিধায় কোনো ভাবে ব্যবহার করলেও চলে।’
শত্রুর বুলেটের মুখে রক্ত দিয়ে যারা লিখে গেছেন বাংলার প্রতিটি অক্ষর এর ভুল ব্যবহার শুধু তাদের অসম্মানই করে না বিভ্রান্ত করে পুরো জাতিকে। এতদিনে এসেও বাংলার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারায় ভাষা সৈনিকদের আক্ষেপ আর প্রশ্ন আদৌ কি নেয়া হবে এর সঠিক ব্যবহারের উদ্যোগ।
ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক বলেন, ‘বাংলা ভাষার বানানের জন্য দুই শ্রেণী দায়ী। প্রথম সরকার আর দ্বিতীয় শিক্ষিত শ্রেণী। কারণ এদের আগ্রহ ও সততার অভাব আছে বলে আমি মনে করি।’
বাংলার এমন ব্যবহার চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই ভাষা সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ভাষাবিজ্ঞানীদের।