ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিতে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কৃষিতে প্রণোদনা

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তিই কৃষি। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে এই কৃষি থেকে। ফলে চাষাবাদ পদ্ধতিকে আরও আধুনিকায়ন এবং উৎপাদনশীল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) দুই কিস্তিতে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা কৃষি প্রণোদনা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৪২ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বাকি ৩৩ কোটি টাকার কৃষি প্রণোদনা চলতি বছরে শুরু করা হবে বলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন। ১ ফেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রদত্ত এই কৃষি প্রণোদনা দেয়ার ব্যক্ত করেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিন ফসলি চাষের জন্য কৃষিতে এই প্রণোদনা দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এই অর্থ নগদে দেয়ার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। কারণ এতে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে। বরং প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই এই প্রণোদনার কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় দ্রুততম গতিতে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি উৎপাদনের অন্যতম প্রতিবন্ধক। বোমাবাজি আর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে প্রকৃতির যে ভারসাম্য বিঘিœত হয় তার কোন দায়ভাগ সংশ্লিষ্টরা নেয় না। ফলে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতিকারের কোন উপায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে নিজেদের স্বার্থেই পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনশীলতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এরই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে এই কৃষি প্রণোদনার কার্যক্রম শুরু করা। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সমতা রক্ষা করে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত এই প্রণোদনার ৩১ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হবে আউশ চাষে। বাকি ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে পাট এবং কুমড়া চাষে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহিত করতে এ ধরনের প্রণোদনা সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। ফসলের উন্নতমানের সম্প্রসারণ ও প্রণোদনার অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। কৃষি জমিতে কৃষকরা যাতে অপ্রয়োজনীয় বালাই নাশক ব্যবহার না করে সেদিকেও কৃষি বিভাগ কড়া নজর রাখছে। উচ্চ ফলনশীল আউশ ও নারিকা চাষে বীজ ও সারসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য সরবরাহ করতে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৮ জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। আগামী মার্চ মাস থেকে এই প্রণোদনার কার্যক্রম শুরু করা হবে। আউশের জন্য ২ লাখ কৃষক এবং নারিকার জন্য ২০ হাজার কৃষককে এই নতুন প্রকল্পের সহায়তা দেয়া হবে। বীজ এবং সারসহ আনুষঙ্গিক কৃষি পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে এই মহৎ কর্মযজ্ঞের যাত্রা শুরু হবে। এর ফলে প্রায় ৭০ হাজার টন আউশ এবং ৬ হাজার টনেরও বেশি নারিকা উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ২ কোটি কৃষকের কৃষি কার্ড রয়েছে। এদের মধ্য থেকেই এই প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হবে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়ে দেশটি আজ কৃষি উৎপাদনে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। চাষাবাদ পদ্ধতিতে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা অতিরিক্ত উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এমন মহতী উদ্যোগ ভূমির উৎপাদনশীলতাকেও অনেকটা এগিয়ে দেবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আজ সারাবিশ্বের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। সাধারণ মানুষের কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেশটিকে সমৃদ্ধির দিকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নজরে আনতে হবে যাতে কোন ধরনের অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। কৃষিবান্ধব এই মহৎ সম্ভাবনা যেন কোনভাবেই বিঘিœত না হয়। যথার্থ এবং সঠিক পথে সরকারের এত বড় আয়োজন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারলে ফসল উৎপাদনে দেশ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। সরকারের এই মহতী কর্মযোগকে সাধুবাদ যা দেশের পুরো অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখবে।
×