ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

’১৮ সালে দৈনিক ৫শ’ ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

’১৮ সালে দৈনিক ৫শ’ ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হবে

মামুন রশিদ ॥ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির আগেই রাজস্বপুল গঠন করতে হবে। রাজস্বপুল গঠনে সম্প্রতি তিন দফা সুপারিশ করেছে জ্বালানি বিভাগ গঠিত দর পর্যলোচনা কমিটি। এলএনজি আমদানির ফলে দেশে গ্যাসের দর আগামী ১০ বছরে ৫ গুণ বেড়ে যাবে। মূল্য কী ভাবে সাধ্যের মধ্যে রাখা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করতে ওই কমটি গঠন করে জ্বালানি বিভাগ। সরকারের জ্বালানি বিভাগ মনে করছে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করবে। এরপর ২০২৪ সালে আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হবে। এই পরিমাণ এলএনজির সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের গ্যাসের মূল্যহার সমন্বয় করলে দাম বেড়ে যাবে। একবার উচ্চমূল্যের জ্বালানি ব্যবহার শুরু করলে দেশে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। যা বড় আশঙ্কার বিষয় বলে মনে করছে সরকার। দেশে গ্যাসের মজুদ এবং ব্যবহারের হিসেব বিবেচনা করলে এলএনজি আমদানির কোন বিকল্প নেই। পেট্রোবাংলাই বলছে ২০২০ এর পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০৩০ নাগাদ দেশে সকল খনির মজুদ একেবারে শেষের পথে থাকবে। সরকার এখন কেবলমাত্র বিদ্যমান খনিগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে। যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মাহবুব মুরশেদকে প্রধান করে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে একটি রাজস্বপুল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি তাদের পর্যালোচনায় যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সরকার বছরভিত্তিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে পারে। এখানের লভ্যাংশ এলএনজির ঘাটতি মেটাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে রাজস্বর সংস্থান করা যেতে পারে। এলএনজি স্ট্রিমের জন্য প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট সম্পূর্ণ রেয়াত করে এখান থেকে সংগৃহীত অর্থ রাজস্ব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে এখন গ্যাসের বিক্রয়মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটের দুই দশমিক ১৭ ডলার। এখন সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি মূল্য ৮ মার্কিন ডলার। এই সময়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা দৈনিকের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলে রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং সকল রকমের কর অন্তর্ভুক্ত করলে দাম পড়বে ৪ দশমিক ৩৫ ডলার। আর এলএনজি পৃথকভাবে বিক্রি করতে চাইলে দাম পড়বে ২৩ দশমিক ১১ ডলার। তবে সকল কর রেয়াত করলে এলএনজির দর পড়বে ১০ দশমিক ৪০ ডলার আর মিশ্রিত গ্যাসের দাম পড়বে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। অর্থাৎ এখনই মিশ্রিত গ্যাসের দাম সরাসরি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তবে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ হিসেবে কমিটি বলছে দেশে গ্যাসের সঙ্কট সামাল দিতে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যত বেশি এলএনজি আমদানি হবে গ্যাসের দামও ততই বৃদ্ধি পাবে। কমিটি তাদের সুপারিশে বলছে এলএনজি আমদানি করে শুরুতেই বাজার দরে বিক্রি করা প্রয়োজন। কিন্তু শুরুতেই বাজার দরে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এজন্য এলএনজির সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের মিশ্রণের মাধ্যমে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে গ্যাস ব্যবহারের একটি অগ্রাধিকার ক্রম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে উপযুক্ত এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার হবে। এতে স্বল্প এবং মধ্য মেয়াদে ব্যয়বহুল এলএনজির পরিমাণ হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর আমদানিকৃত এলএনজিকে রিগ্যাসিফিকেশন করে উৎপাদিত গ্যাস এবং দেশীয় গ্যাস ও এলএনজির মিশ্রণের ফলে মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একজন সদস্যকে আহ্বায়ন করে কমিটি গঠন করা হয়। এতে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বুয়েট এবং বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রতিনিধি ছিল। জ্বালানি বিভাগ গত ৩১ জানুয়ারি এলএনজি সংক্রান্ত একটি বৈঠকে প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে। দেশে এখন প্রতিদিনের গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব সময় ঘাটতি থাকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ক্রমান্বয়ে এ ঘাটতির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। সরকার প্রথমধাপে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে। এছাড়া ভাসমান এবং স্থায়ী কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চেষ্টা করছে। সরকার যত এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভর করবে তত জ্বালানির দাম বাড়বে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে গ্যাসের দাম ৫ গুণ বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। এজন্য আগেভাগেই সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করছে বিশেষজ্ঞরা।
×