ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

ছুটির দিনে উৎসবের আমেজ, ত্রুটিমুক্ত করতে চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ছুটির দিনে উৎসবের আমেজ, ত্রুটিমুক্ত করতে চিঠি

মোরসালিন মিজান ॥ দারুণ ব্যাপার বলতে হবে। মেলা শুরু হতে না হতেই শুক্রবার। ছুটির দিন যেহেতু, হাতে সময় ছিল। কাজে লাগিয়েছেন অনেকেই। ফলাফল- বিভিন্ন বয়সী মানুষের শ্রোত। জমজমাট মেলা। লোকসমাগম এত ছিল যে, দেখে মনেই হয়নি তৃতীয় দিন! ঘুড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি সবাই পছন্দের বইয়ের খোঁজ করেছেন। কিনেছেন। তবে আয়োজনের নানা ত্রুটি দেখা গেল তৃতীয় দিনও। আগের দিন পর্যন্ত প্রকাশকরা আলাদা আলাদাভাবে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার সেটি পেল আনুষ্ঠানিক চেহারা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হলো অসন্তোষ। বিকেলে মেলা ঘুরে তাম্রলিপি প্রকাশনীর সামনে যেতেই দেখা মেলে প্রকাশক নেতা ওসমান গনির। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সমিতির অফিসে চলে যাওয়া। মেলায় প্রথমবারের মতো এ ধরনের অফিস। পরিপাটি কক্ষে আগে থেকেই বসে ছিলেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক মোস্তাফা সেলিমসহ অন্যরা। সবারই খুব সিরিয়াস ভঙ্গি। কী কারণ? জিজ্ঞেস করে জানা গেল, মেলার অব্যবস্থাপনা দেখে যারপরনাই অসন্তুষ্ট তারা। অজস্র ত্রুটি বিচ্যুতি। অসঙ্গতির শেষ নেই। মাজহার বলেন, আমরা প্রকাশকরা মেলা পরিদর্শন করে সেগুলো চিহ্নিত করেছি, লিখিত আকারে এগুলো একাডেমির মহাপরিচালককে জানানো হবে। মোস্তফা সেলিম যোগ করলেন, সময় বেঁধে দেয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে সমস্ত সমস্যা দূর করতে হবে একাডেমিকে। তবে কী কী ত্রুটি সমিতির চোখে ধরা পড়েছে তার সম্পূর্ণ তালিকা এই লেখা তৈরি পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব হয়নি। প্রথম শিশু প্রহর ॥ পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার ছিল প্রথম শিশু প্রহর। শিশুদের বিশেষ প্রহর উপলক্ষে এদিন মেলা শুরু হয় যায় সকাল বেলায়। ভোরের পাখির মতোই আসতে থাকে বাচ্চারা। সচেতন বাবা-মায়েরা সন্তানদের মেলায় নিয়ে আসেন। এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশু কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে ছোটদের পাঠ উপযোগী বইয়ের অনেক স্টল। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলগুলো ঘুরে দেখে সোনামনিরা। ছিল খেলাধুলার ব্যবস্থাও। খেলতে খেলতে বই দেখা। আবার বই দেখতে দেখতে খেলা। আনন্দেই কেটেছে ওদের। অবশ্য শিশুদের বই আছে উদ্যানের অন্য অংশেও। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের মূল বইয়ের পাশে শিশুদের বই সাজিয়ে রেখেছে। সেগুলোও যতটা সম্ভব দেখার চেষ্টা করেছে শিশুরা। শিশু কর্নারে দুপুরে কথা হয় আলিয়া নামের এক শিশুর সঙ্গে। শিক্ষক আলী মুমেনের ৮ বছরের মেয়ে। বলল, আমাদের বাসায় অনেক বই আছে। কিন্তু এখানে বেশি সুন্দর বই। কার্টুন আঁকা রঙিন বই সে খুলেও দেখাল। রবিন নামের আরেক শিশু এসেছিল মিরপুর থেকে। তারও হাতে কয়েকটি বই। মা মুনতাহা বললেন, দেখে যেটা ভাল লাগে সেটাই নিয়েছে। আমিও বারন করিনি। বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ বলে জানান তিনি। প্রকাশকের কথা ॥ মুক্তমঞ্চের একেবারে গা-ঘেঁষে আছে অ্যাডর্ন। ঘুরতে ঘুরতে সেদিকে যেতেই দেখা হলো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সৈয়দ জাকির হোসাইনের সঙ্গে। প্যাভিলিয়নের সামনে বসার ব্যবস্থা করেছিলেন যথারীতি। সেখানে বসেই কথা হলো তার সঙ্গে। খুব আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা নয়। বই, বইয়ের মান, মেলার আয়োজন ইত্যাদি নিয়ে দুই চার কথা। অন্য বইয়ের পাশাপাশি শিশুদের উপযোগী অনেক প্রকাশনা আছে তার। এসেছিল শিশুরা? কেমন গেল প্রথম শিশুপ্রহর? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকাল থেকেই মেলায়। গেট খুলে দেয়ার পর থেকেই বাচ্চারা আসতে শুরু করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলা ঘুরে তারা বই দেখেছে। নিজের পছন্দেরটা কিনেছে। ভালই। তবে শিশুদের জন্য আলাদা প্রহরের পক্ষে হলেও, তিনি শিশু কর্নারের কোন প্রয়োজন দেখেন না। বলেন, সবাই কমবেশি ছোটদের বই করে। বাচ্চারা মেলা ঘুরে সেসব বই দেখুক। তাদের একটি কর্নারে আটকে রাখার কিছু নেই। নতুন বই ॥ পুরনো বই আছে সব স্টলেই। নতুন বইও চলে এসেছে। নতুন বলতে, গত বছরের মেলার পর প্রকাশিত বই। এবারের মেলায় প্রথম দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু স্টল ঘুরে দেখা যায়, এমন ১০ থেকে ৩০টি বই বিশেষভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সুবর্ণর স্টলে গিয়ে দেখা গেল এক ডজনের মতো নতুন বই। বইগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ চর্চা-১৩’, মুর্শিদা বিন্তে রহমানের ‘আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলার বানিয়া’, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ ও মাখন লাল রায় চৌধুরীর ‘জাহানারার আত্মকাহিনী।’ দীপনের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনী থেকে এসেছে অনার্য আদিমের ‘শূন্যতার স্বর’, মুরাদ হুসাইনের ‘শিকড়ের জলছাপ’, মাহবুবুর রহমান শিশিরের উপন্যাস ‘দূর বাগানের সাহেব’ ও রিয়াজুল আলম শাওনের রহস্য গল্প ‘একজন সাইকো।’ অন্যপ্রকাশের ফর্দ অনুযায়ী নতুন এসেছে হুমায়ূন আহমেদের রচনাবলীর নবম ও দশম খ-। এর বাইরে আছে মাসুদ আহমেদের উপন্যাস ‘রৌদ্রবেলা ও ঝরা ফুল’ মোস্তফা কামালের উপন্যাস ‘রূপবতী’ ও সাদিয়া মাহজাবীন ইমামের গল্পগ্রন্থ ‘রক্তমূলে বিচ্ছেদ।’ অনিন্দ্য প্রকাশের স্টলে নতুন দেখা গেল স্বকৃত নোমানের ‘শেষ জাহাজের আদমেরা’, মোশতাক আহমেদের ‘সেরা পাঁচ উপন্যাস’, সাব্বির খানের ‘পোড়া মৃতদেহের রাজনীতি ও সময়ের গল্প’ ও কবিতা ও কাব্য চিন্তা নিয়ে স্বপন নাথের রচনা ‘কবিতার নন্দনবিশ্ব।’ লেখকের সঙ্গে কথোপকথন ॥ ঠিক লেখক নয়। কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। কিছুদিন আগে পর্যন্ত জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার একাডেমির মূল মঞ্চে কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি। সে অনুষ্ঠানের সূত্র ধরেই কথা হলো তার সঙ্গে। মেলা মঞ্চে প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলার অনুষ্ঠানমালা চলে। এবার সব কি ‘আন্তর্জাতিক’ হয়ে গেল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন চলছে তো একসঙ্গে। আমি সভাপতিত্ব করেছি দ্বিতীয় দিন। সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন চলবে আজ শনিবার পর্যন্ত। একুশের মূল মঞ্চ চালু হবে তাহলে পঞ্চম দিন থেকে? এটা কতটা সঠিক কাজ হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে একটির ভেতর আরেকটি ঢুকিয়ে দেয়া উচিত হয়নি। একুশের মেলায় সব সময় একটি মঞ্চ থাকে। বাংলা একাডেমিতে নির্মিত মঞ্চ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। সেমিনার চলে। থাকে সাংস্কৃকিত অনুষ্ঠান। এবার যা হচ্ছে সবই ‘আন্তর্জাতিক’ নামে। আজও শিশু প্রহর উপলক্ষে সকাল ১১টায় খুলে দেয়া হবে মেলার সব প্রবেশ দ্বার।
×