ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের ট্রানজিট পিলারে পাইল বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের ট্রানজিট  পিলারে  পাইল বৃদ্ধি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তের দুই পিলারের পাইল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১২টির স্থলে এখন পাইল হবে ১৬টি। শেষ প্রান্তে অর্থাৎ সেতুর সর্বশেষ পিলার (৪২ নম্বর পিলার) জাজিরা প্রান্তে এই ট্রানজিট পিলারে ইতোমধ্যেই তিনটি পাইল স্থাপন হয়েছে। এখন লোড পরীক্ষার পরই বাকি ১৩ পিলার স্থাপন হবে। একইভাবে সেতুর শুরু প্রান্ত (১ নম্বর পিলার) মাওয়া ট্রানজিট পিলারটিতেও ১৬টি পাইল স্থাপানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেতুর ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪৬টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। এই প্রান্তে ভায়াডাক্টের ১৯৩টি পাইল স্থাপন হবে। বাস্তবতার নিরিখে সেতুটিকে মজবুত রাখার জন্যই বিশেষজ্ঞদের মতামতে এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান। এছাড়া পদ্মার পাইলের গভীরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ১১৫ মিটারের পরিবর্তে পাইলগুলো ১২৮ মিটার গভীর করা হচ্ছে। এদিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টে টেস্ট পাইলে রিডিং ভুলের কারণে আবার নতুন করে আরেকটি টেস্ট পাইল করা হচ্ছে। এটির লোড পরীক্ষার পরেই মাওয়া প্রান্তে ভয়াডক্টের কাজ শুরু হবে। মূল সেতুর কাজে গতি আনতে চলতি মাস থেকে এ কাজে যোগ দেবেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং হংকংয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ। কাজ যে অংশটুকু পিছিয়ে গেছে, সেটা পুষিয়ে নিতে তারা পরামর্শ দেবেন। এখন মাওয়া প্রান্তে পদ্মায় পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ৮ ফেব্রুয়ারি মাওয়া পাইল ড্রাইভ শুরুর কথা রয়েছে। শুকনো মৌসুমের সুবিধা কাজে লাগাতে পদ্মা সেতুতে পুরোদমে চলছে পাইলিংয়ের কাজ। একই সময়ে গতি এসেছে নদী শাসনের কাজেও। চলতি মাস থেকে কাজের তদারকিতে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বিশেষজ্ঞ। ফলে এ দুটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। প্রমত্তা পদ্মা এখন বেশ শান্ত। নেই আগের মতো তীব্র স্রোত। নদীর এই রূপ গতি আনছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে। হরদম ব্যস্ততায় মাওয়ায় এখন বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে। মূল পদ্মা সেতুর পিলার ৪২টি। দু’তীরের দুটি পিলার বাদে পদ্মার ৪০টি পিলার হবে একই রকম। এক একটি পিলারে ছয়টি করে মোট ২৪০টি পাইল মাটিতে বসানো হবে। এখন পর্যন্ত জাজিরার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ছয়টি করে পাইল বসানোর কাজ শেষ। দুই প্রান্তে মিলিয়ে মোট ৩৯টি পাইলের নিচের অংশ এবং ১৫টি পাইলের পুরো অংশই মাটিতে বসানো হয়েছে। এক সঙ্গে চলছে মোট ১১টি পিলারের কাজ। নতুন করে মাওয়া প্রান্তে এখন কাজ শুরু করার জন্য মঞ্চ তৈরি করে যন্ত্রপাতির সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রাপ্ত অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৪৩ দশমিক ৮৮ ভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই রিপোর্ট অনুযায়ী কাজ হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮ ভাগ। তবে আগামী বর্ষার আগে কাজ বেশ এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেতু থেকে সড়কে নামার জন্য জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের কাজে ব্যাপক গতি এলেও এখন পর্যন্ত মাওয়া প্রান্তে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। টেস্ট পাইল পরীক্ষার সংক্রান্ত ভুল রেডিংয়ের কারণে বিলম্ব হয়। বিদেশে পরীক্ষায় পাঠিয়ে এটি নিশ্চিত করতে সময় লেগে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির ভুলেই এটি হয়েছে। তাই তাদের খরচেই এই টেস্ট পাইলটি আবার করা হচ্ছে। মূল সেতুর কাজে গতি আনতে চলতি মাস থেকে এ কাজে যোগ দেবেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং হংকংয়ের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ। কাজ যে অংশটুকু পিছিয়ে গেছে, সেটা পুষিয়ে নিতে তারা পরামর্শ দেবেন। বর্ষায় ব্যাহত হয়েছে নদী শাসনের কাজও। এখন পর্যন্ত ৩৫ দশমিক তিন পাঁচ ভাগ কাজ এগিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও সম্ভব হয়েছে ২৫ দশমিক নয় চার ভাগ। অন্য তিনটি প্রকল্পের মধ্যে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ এবং সার্ভিস এরিয়া এবং মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় শতভাগই স¤পন্ন হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর নিয়মিত পাক্ষিক সভায় প্রকল্পটি নানা বিষয় উঠে আসে। দোগাছির সার্ভিস এরিয়া-১ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভাটিতে সেতুর কাজের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ সেতুর নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মাওয়ার কুমারভোগ ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর হরেক রকম কাজ চলছে এখানে। পাইলের টিউব তৈরি কাজ ছাড়াও জোরেশোরে চলছে স্প্যান ফিটিংয়ের কাজ। চীন থেকে আসা খ-াকৃতির স্প্যান অংশগুলোকে সরাসরি জ্বালাই করে জোরা লাগোনো হচ্ছে। ফিটিং করা প্রথম স্প্যানটি লোড টেস্ট করার পর এখনই ওয়ার্কশপেই রাখা হয়েছে। ১৫০ মিটার এই স্প্যানটি দেখলেই পদ্মা সেতুর একটি অবয়ব বোঝা যাচ্ছে। এটির দু’মাথায় খাটো পিলারের মতো করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আর এর কিছু দূরেই বাকি তিনটি স্প্যানের অংশগুলো রাখা। এগুলো ধাপে ধাপের জোরা লাগানো হচ্ছে। এদিকে চীনে আরও এই স্প্যান তৈরির কাজ চলছে পুরো দমে। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নতুন তলদেশের পাইল কংক্রিটিংয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে বিলম্ব হলেও খুব দ্রুতই সেতুর পাইলে আরও গতি বাড়বে। প্রায় ১২৬ মিটার দীর্ঘ এক একটি পাইল হ্যামার দিয়ে স্থাপনের সময় লাগছে ৭ ঘণ্টা। তাই ধাপে ধাপে পাইলগুলো দ্রুত করা সম্ভব হবে। পাইল স্থাপন করা গেলেই দ্রুত এগিয়ে যাবে সেতুর কাজ। এদিকে মাওয়া প্রান্তে এখন ঢুকতেই দেখা যাবে পদ্মা সেতুর সুদৃশ্য টোলপ্লাজা। আধুনিক এই টোলপ্লাজা দেখেই পদ্মা সেতুর দিকে এগুতে চোখে দেখা যাবে কর্মযজ্ঞের নানা দৃশ্য। নদীতে সেতু দৃশ্যমান না হলেও পাইল বসানো এবং নানা কাজে ভারি ভারি যন্ত্রপাতি দেখেই স্পষ্ট হবে কত বড় আয়োজন এখানে।
×