ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ পাশে থাকায় সন্তুষ্ট

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় উদ্বিগ্ন ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ   পাশে থাকায় সন্তুষ্ট

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকার রক্ষায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন। তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানে সন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশটি। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরকালে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। তিন দিনের সফর শেষে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস শুক্রবার বেলা পৌনে দিনটায় ঢাকা ত্যাগ করেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকা ছাড়েন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান। বিদায়ের আগে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি বিশেষ দল মাহমুদ আব্বাসকে গার্ড অব অনার দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা সফরকালে মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানে ‘দুই জাতি দুই রাষ্ট্র’ নীতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দেশটির বর্তমান সমস্যা তুলে ধরেন। এ সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগে নিন্দা জানান তারা। অতীতে বাংলাদেশ যেভাবে ফিলিস্তিন সরকারের পাশে ছিল, এখনও সেভাবেই বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে একটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন গঠনে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে দু’পক্ষের পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ফিলিস্তিনের সরকার ও জনগণ এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরাইলকে জোরালো সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও অবশ্য বরাবরের মতো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে ওবামা সরকার শেষ সময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি। এখন ইসরাইলের তেলআবিবে থাকা মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অঙ্গীকারের বিষয়ে আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ সফরের সময় ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও তার জনগণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। ইসরাইলের আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের পক্ষেও কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি দিন দিন বিশ্বের সমর্থন বাড়ায় সে দেশের মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আসছে। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পতাকা তোলা হয়। তবে ঢাকা সফরের সময় ফিলিস্তিনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন ও সহায়তা চেয়েছেন মাহমুদ আব্বাস। পাকিস্তান হয়ে ঢাকা সফরে আসেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। পাকিস্তানেও তিনি তিন দিন সফর করেছেন। ইসলামাবাদে ফিলিস্তন দূতাবাসের নতুন একটি ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। এছাড়া পাকিস্তান সরকারের কাছে ফিলিস্তিনের বর্তমান সমস্যা তুলে ধরেছেন মাহমুদ আব্বাস। যদিও ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে যে, ইসলামাবাদ সফরকালে মাহমুদ আব্বাসের নিকট কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরেছে পাকিস্তান। ঢাকা ছাড়ার আগে শুক্রবার সকালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলনেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন মাহমুদ আব্বাস। তিন দিনের সরকারী সফর শেষে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটায় ঢাকা ত্যাগ করেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকা থেকে জর্ডান হয়ে প্যারিসে একটি কনফারেন্সে যোগ দেবেন। উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিনি ঢাকায় আসেন। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ আল মালকী, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আলহাব্বাশ, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবুরুদাইনাহ, কূটনীতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাজদি খালদিসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন।
×